মাঈনুল ইসলাম নাসিম : চলতি বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যায় বহুল প্রতিক্ষীত ঐ হাই প্রোফাইল ভিজিট। কঠিন বাস্তবতা হলেও সত্য, স্বাধীনতার প্রায় ৪৪ বছর অতিবাহিত হতে চললেও বাংলাদেশের তরফ থেকে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান পর্যায়ে নিউজিল্যান্ডে আজ অবধি কোন রাষ্ট্রীয় সফর অনুষ্ঠিত হয়নি।
সরকার প্রধান পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফর অনুষ্ঠিত না হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্যানবেরাস্থ বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্বরত হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও নিউজিল্যান্ড ও ফিজির দায়িত্বে আছেন তিনি। রাষ্ট্রীয় সফরের গুরুত্ব সহ নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানান বিষয়াদি নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো হলেও হয়তো অচিরেই এই সফরটি অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা রাখছি”।
সিনিয়র কূটনীতিক কাজী ইমতিয়াজ হোসেন জানান, “নিউজিল্যান্ড ছোট দেশ এবং জনসংখ্যা কম বিধায় তাদের সাথে আমাদের ট্রেড ভলিউম যদিও খুব একটা বড় নয়, তারপরও এটা বছরে প্রায় ২শ’ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি। নিউজিল্যান্ড থেকে আমরা বছরে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের পন্য আমদানী করে থাকি, যার প্রায় ৯০% হচ্ছে ডেইরী প্রোডাক্ট। অন্যদিকে দেশটিতে আমাদের রপ্তানীর পরিমান বছরে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, যার প্রায় ৯০% যথারীতি আরএমজি তথা রেডিমেইড গার্মেন্টস। জুট প্রোডাক্টও এখানে আসছে বাংলাদেশ থেকে”।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগ্রিকালচার সেক্টরে নিউজিল্যান্ড যেহেতু অভাবনীয় সাফল্যের অধিকারী, তাই দেশটির সাথে বাংলাদেশের সায়েন্টিফিক কো-অপারেশন বাড়াতে বাংলাদেশ উদ্যোগী হয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। মৎস ও পশুসম্পদ খাতেও একই সম্ভাবনার কথা বললেন তিনি। দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে করা বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগনের প্রতি অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন তাঁরা। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের পথে ইকোনোমিক্যালি যেভাবে এগুচ্ছে বাংলাদেশ, সেটাকে সাধুবাদ জানায় নিউজিল্যান্ড”।
বিশেষ কিছু কারণে নিউজিল্যান্ডের সরকার ও জনগন এখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের খুব ভালো জানেন বলে জানান হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। তিনি বলেন,“প্রথমতঃ এখানকার বাংলাদেশীরা প্রায় সবাই শিক্ষিত এবং অনেকেরই ইন্টেলেকচুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও খুব ভালো করে লেখাপড়া করান। কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশীদের সুন্দর সহাবস্থান এবং সাংস্কৃতিক সচেতনতার বিষয়টিও সমীহ করে থাকে নিউজিল্যান্ডের জনগন। বাংলাদেশীরা হার্ড ওয়ার্কিং এবং সিনসিয়ার ওয়ার্কার এমনটাও প্রায়ই শুনে থাকি তাঁদের কাছ থেকে”।
বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক সংকটমুক্ত উন্নত দেশ নিউজিল্যান্ডে যদিও বর্তমানে মাত্র ৪ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস, তথাপি এখানকার সবাই সু্প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পেশায়। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-প্রফেসর-গবেষক সহ বিভিন্ন হাই-স্কিল্ড জবে যেমন আছেন অনেকে, তেমনি ব্যবসা-বানিজ্যও তুঙ্গে এখানকার পরিশ্রমী বাংলাদেশীদের। বর্তমানে প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষায় মনোনিবেশ করেছেন এখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সহ স্টুডেন্টদের পার্টটাইম জব সহজেই পাওয়া যায় বিধায় আসছে দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা আরো ব্যাপক হারে এখানে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।