এদিকে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি দেখা দেয়ায়, বিভিন্ন দেশের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি অতি সম্প্রতি ডেনমার্ক ‘স্টাব্লিশমেন্ট ভিসা’ নামে একটা নতুন ভিসা ক্যাটাগরির ঘোষণা দিয়েছে।সামনের দিনগুলোতে ডেনমার্কের শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমের যোগান নিশ্চিতকরণ সহ নতুন নতুন কর্মস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যে ডেনমার্কে অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীরা সাফল্যের সাথে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রী শেষ করার পর নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবসা শুরু করার জন্য (অর্থাৎ নতুন উদ্যোগতা শ্রেণিকে উৎসাহকরণের লক্ষ্যে) ২ বছরের ‘স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার’ ঘোষণা দিয়েছে যা এ বছরের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
ইতিপূর্বে ডেনমার্কে অধ্যয়নরত সকল বিদেশী ছাত্রছাত্রীরাই তাদের স্টাডি প্রোগ্রামের সাথে অতিরিক্ত ৬ মাসের ভিসা পেয়ে আসছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সাফ্যল্যের সাথে পড়াশোনা শেষে অতিরিক্ত ৬ মাসের মধ্যে একটা কাজ যোগাড় করে এ দেশের অর্থনীতিতে দক্ষ জনবল হিসাবে যোগদান করা সহ এদেশের শ্রমবাজারকে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সাথে প্রতিযোগিতামূলক স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করা।
এদিকে, দেখা গেছে ৬ মাসে ডেনমার্কের খুবই ছোট্ট চাকুরীর বাজারে নিজেদের প্রফেশন অনুযায়ী একটা কাজ যোগাড় করা একেবারে অসম্ভব। তবে আশা করা যাচ্ছে অতি সম্প্রতি কার্যকর হওয়া ২ বছরের স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার ফলে ডেনমার্ক থেকে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণকারির একটা অংশ ভবিষ্যতে ডেনমার্কের পড়াশোনা শেষে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে এবং এ দেশ থেকে অর্জন করা শিক্ষা ডেনিশ অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে যা এ দেশের ছোট্ট জব মার্কেটে নতুন নতুন জব সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে এ দেশের নীতিনির্ধারকরা। বলা হচ্ছে, ডেনিশ স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার আওতায় কাউকে নতুন করে কাজের অনুমতি নিতে হবে না এবং এ ভিসা সকলকেই সরাসরি কাজের অধিকার দেবে। এ ছাড়া স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার পাওয়া সকলের ডেনমার্কে নিজস্ব ব্যসসা-বানিজ্য করার সরাসরি সুযোগ দেয়া হয়েছে।
ডেনমার্কে স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার পাওয়ার শর্তঃ
# অবশ্যই ডেনমার্ক থেকে মাস্টার্স অথবা পিএইচডি ডিগ্রী থাকতে হবে
# ডেনমার্কের মাস্টার্স ডিগ্রী ৬০ ইসিটিএস (ECTS) ক্রেডিট এবং এক্ষেত্রে কেউ যদি ডেনমার্কের কোন প্রাইভেট কলেজে থেকে (বিশেষত ব্রিটিশ ডিগ্রী) মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের দেখা দরকার উক্ত ডিগ্রী ডেনিশ মাস্টার্স ডিগ্রীর সমপর্যায়ের (candidatus) কিনা কিংবা ৬০ ইসিটিএস (ECTS) ক্রেডিট রয়েছে কিনা।
# এছাড়া প্রতিটি স্টুডেন্টকে স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার আবেদনে এক বছরের নিজেদের খরচ বহন করতে পারবে এমন নিশ্চয়তাস্বরূপ ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। ভিসা আবদনের উক্ত ১ মাসের যে কোন সময়ের মধ্যে ইস্যুকৃত ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেট এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ২০০৮ সালের শেষের দিকে ডেনমার্কে চালু করা গ্রিনকার্ড স্কিমকে দেখা হচ্ছে একটা ব্যর্থ স্কিম হিসাবে এবং বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী এক উল্লেখ্যযোগ্য গ্রিনকার্ডধারী উচ্চ শিক্ষিত প্রফেশনালরা ডেনমার্কে প্রফেশন অনুযায়ী কাজ পেতে সক্ষম না হওয়ায় ডেনিশ নীতিনির্ধারকরা স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করছে।
যা হোক, এটা নিশ্চিত ডেনিশ স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার আওতায় ডেনমার্কে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আসা অনেকেই স্টাব্লিশমেন্ট ভিসা নিয়ে এ দেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করবেন এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। কিন্তু ডেনমার্কের মত ছোট্ট দেশে যেখানে ডেনিশ ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষার তেমন ব্যাবহার নেই (সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া)সেক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য এ দেশের চাকুরীর বাজারে প্রবেশ করা বেশ দুরূহ।
উপসংহারে বলা যায়, ডেনমার্ক সহ ইউরোপকে উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ অভিবাসীদের উপযুক্ত স্থান হিসাবে নেবার আগে অনেকবার ভেবে দেখা প্রয়োজন। ইউরোপ কখনোই আমেরিকা, কানাডার কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মত অভিবাসীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেনি এবং এখানে অভিবাসীদের সেভাবে স্বীকৃতি দেবার কথা এরা ভাবতেও পারেনা। তারপরও যাদের পক্ষে অভিবাসীদের অভয়ারণ্য আমেরিকা, কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার যাওয়া সম্ভব হচ্ছে তাদের জন্য ডেনমার্ক হতে পারে সেকেন্ড বেষ্ট। বিস্তারিত জানতে পারেন নিম্ন ওয়েভ লিঙ্কের মাধ্যমে https://www.nyidanmark.dk/…/coming…/work/Establishment-card/
আর যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।