মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বিদেশগামী লাখ লাখ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য নিয়ে রং-তামাশার ছিনিমিনি খেলা তার নতুন নয়। জনপ্রতি ৩৩ হাজার টাকায় বছরে ১ লাখ লোক পাঠানো হবে মালয়েশিয়াতে এবং ‘লেটেস্ট ড্রামা’ ১৫-২০ হাজার টাকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে লাখ লাখ কর্মী নেবে সৌদি আরব – এমন মিথ্যাচার করে রীতিমতো ‘জাতীয় ভিলেন’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন আজ প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রাষ্ট্রের কোষাগার খালি করে দলবল নিয়ে সৌদি আরব ঘুরে এসে শ্রমবাজার খোলার ‘ভূয়া সংবাদ’ প্রচার করিয়ে তিনি ভয়ানক প্রতারণার আশ্রয় নেন বিদেশ গমনেচ্ছুক আম-জনতার সাথে।
১৭ ফ্রেব্রুয়ারি ঢাকার প্রবাসী কল্যান (?) ভবনে সাংবাদিকদের ডেকে মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, “সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে এ মুহূর্তে নারী ছাড়া অন্য কোন শ্রমিক নিচ্ছে না”। অথচ কোন সাংবাদিকই তার কাছে সবিনয়েও জানতে চাননি, কেন তাহলে তিনি এতোদিন কঠিন এই সত্যটি চেপে গেলেন ? কেন তিনি শ্রমবাজার খোলার ঢাকঢোল পেটালেন ফ্রি স্টাইলে ? সৌদি আরব সফরের সময়ই যেখানে বাংলাদেশের মন্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, আগে নারী তারপরে বাদবাকি আলোচনা, চাহিদা মোতাবেক ‘হাউজ মেইড’ সাপ্লাই দেয়া হলেই সৌদিরা বিবেচনা করবে অন্য পেশার লোক নেয়ার সম্ভাবনা – কেন তিনি এসব তাৎক্ষণিকভাবে জানাননি ?
১৫-২০ হাজার টাকায় সৌদিতে প্রেরণের নিমিত্তে সরকার কোন নিবন্ধনের ডাক দেয়নি – সংবাদ সম্মেলনে এমন জঘন্য মিথ্যাচার করতেও পিছপা হননি সরকারের বোঝা এই ‘রং হেডেড’ মন্ত্রী। উপস্থিত কতিপয় ‘বেকুব মিডিয়া’র প্রতিনিধিরাও মন্ত্রী যেটাই বলেছেন সেটাই গোগ্রাসে গিলেছেন। সৌদি পাঠাবার ‘রাষ্ট্রীয় তোলপাড়’ যদি না-ই করা হবে তবে ডিজিটাল মেলায় কেন হয়েছিল নেক্কারচনক সব তান্ডব ? ১শ’-২শ’ টাকার ফর্ম ৫শ’-হাজার টাকায় কেন বিক্রি করেছিলো মন্ত্রীর নিজস্ব এজেন্টরা – এই প্রশ্নটিও করার দুঃসাহস দেখায়নি কেউ। মন্ত্রীর নির্দেশে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দাস্থ কনস্যুলেটের ‘বিশেষ’ ব্যবস্থাপনায় ‘আরব নিউজ’ পত্রিকায় কেন ‘আই-ওয়াশ’ মার্কা প্রেস রিলিজগুলো বারবার প্রচার করা হয়েছিল – এর কোন জবাব আসেনি ১৭ ফ্রেব্রুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে।
নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নাকি গুরুত্ব দিচ্ছেন এখন – ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে এমন অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তাও বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ। সৌদি মালিকরা নির্যাতন-নিপীড়ন করলে নাকি রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের হটলাইনে ফোন করলেই হবে, মন্ত্রীর মুখে এমন অযৌক্তিক ও অবাস্তব ‘আশার বানী’ শুনেও উপস্থিত কোন সাংবাদিক তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেননি। নিজ দেশের নারী শ্রমিকদের ভয়াবহ নির্যাতন থেকে বাঁচাতে ইন্দোনেশিয়া ফিলিপাইন ও শ্রীলংকা যেখানে সৌদি আরবে ‘হাউজ মেইড’ প্রেরণ বন্ধ করে দিয়েছে, কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার নারী গৃহকর্মীরা যেখানে বছরের পর বছর ‘যারপরনাই’ নির্যাতিতা সৌদি আরবে, সেখানে বাংলাদেশের অবলা নারীদের নিরাপত্তা দেবে দূতাবাসের হটলাইন ?
অনুসন্ধানে জানা যায়, বয়সের ভারে আক্রান্ত ‘রং হেডেড’ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের স্বভাবসুলভ বদমেজাজী আচরন ইদানীং আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে বা বিরুদ্ধাচরণ করলে প্রয়োজনে ‘বিশেষ’ এজেন্সি দিয়ে ‘খেয়ে ফেলবেন’ – এমন হুমকিও দিয়েছেন তিনি একাধিক সাংবাদিককে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সরকারের ভেতরের লোকজন এমনকি দায়িত্বশীল মন্ত্রী-এমপিরাও খুব ভালো করেই জানে, বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধ্বংসের মূল হোতা খন্দকার মোশাররফ এবং কোন্ খুঁটির জোরে এই ‘অকালকুষ্মান্ড’ মন্ত্রী এখনো বহাল তবিয়তে। শ্রমবাজার খোলার এই মিথ্যাচার ও ধোকাবাজির জন্য কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে না – এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনতার আদালতে।
উল্লেখ্য কিছুদিন আগে এই বিষয়ের উপর একটি লেখা প্রকাশ করা হয়েছিলো আমিওপারি ডট কমে “সৌদিতে যৌনদাসী সাপ্লাইয়ের টেন্ডার পেয়েছে বাংলাদেশ” লেখাটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুণ।