দিপ জাকিরউল্লাহ, টিইউ ড্রেসডেনঃ শুরুটা করব তিনটা ভিন্নরকম তথ্য দিয়ে!!!
১) ভিসা ইন্টারভিউ দেয়ার সময় এম্ব্যাসির ভিতরে থাকা একটি ম্যাগাজিনের দেয়া তথ্যহল, ২০১৩ সাল পর্যন্ত জার্মানীতে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সংখ্যা ৩০০৯০০, যা আমেরিকা ও কানাডার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ।
২) NTV এর এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশে জার্মান এ্যম্বাসাডর Dr. Albrecht Conze কেপ্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের জন্য DAAD স্কলারশীপের সংখ্যা বাড়ানো হবে কিনা? উত্তরে উনি না বলেছেন এবং নতুন স্টুডেন্ট নেয়ার ব্যাপারে জার্মান সরকারের বর্তমান কিছু চিন্তা ভাবনার কথা বলেছেন। আপনাদের জন্য সেই সাক্ষাতকারে ভিডিওটি এখানে তুলে ধরা হলঃ
[youtube ev76__YP_lw?modestbranding=1&rel=0 nolink]
৩) এটা সবার জানা জার্মান এম্ব্যাসির নতুন কিছু রুলস।
প্রথম তথ্যটা বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের জন্য আশার কথা হলেও দ্বিতীয় তথ্য তার বিপরীত এবং এম্ব্যাসির নতুন নিয়ম হতে পারে তারই প্রতিফলন (যেন না হয়)। সঠিক কারণ কি আমি জানি না কিন্তু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে ব্লক এ্যকাউন্ট দেখিয়ে ভিসা পাওয়া আমি তৃতীয় স্টুডেন্ট।
আমার ভিসা পাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব,অন্যদের সাথে মিলে যেতে পারে আবার নাও পারে, দয়া করে কেউ মিলাতে চেষ্টা করবেন না কারণএকই দিনে একই সাথে ইন্টারভিউ হলে রেজাল্ট ভিন্ন হয়। ইন্টারভিউ দেন যার কাছে তিনি এগুলো নিয়ে কাজ করেন না, অন্যভাবে যারা আপনার ফাইল নিয়ে কাজ করেন তারা আপনার ইন্টারভিউ নেননা। বাংলাদেশীরা ইন্টারভিউ নিলেও আপনার ফাইলগুলো নিয়ে কাজ করে জার্মানরা। তাই আপনার ফাইল নিয়ে তাদের কোন গ্যাপ থাকলে আপনাকে ফোন করা হয় অথবা ডকুমেন্টস চাওয়া হয়।
ভিসা পাওয়ার অভিজ্ঞতাঃ
আমার ইন্টারভিউ হওয়ার ২৮ দিন পর সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ ভিসা নেয়ার জন্য পাসপোর্ট নং আসে, ৮ তারিখ আমি পাসপোর্ট নিতে যায়, আমাকে আরও অনেক প্রশ্ন করে ইন্টারভিউ নিয়ে বলা হয় এখন ভিসা দেয়া যাচ্ছে না এবং এম্ব্যাসির ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে যদিও পাসপোর্টে ভিসা স্টিকার লাগানো ছিল (ভিসা স্টিকার দেখেও হাতে না পাওয়ার কষ্ট ভোগ করেছি ৫৫ দিন)। ২১ তারিখ এম্ব্যাসি থেকে ফোন আসে এবং ই-মেইল দেয় Deautsch Bank এ ব্লক এক্যাউন্ট সার্টিফিকেট এক মাসের ভিতর জমা দিতে হবে। ২২ তারিখ এম্ব্যসি যাই কিভাবে কি করতে হবে জানতে, ওখানে আরও কয়েক জনকে পাই যাদেরকেও একই কাজ করতে বলা হয়েছে। আমি ২৭ তারিখ ব্যাংক এক্যাউন্ট খোলার Application জমা দেই এবং অক্টোবরের ৯ তারিখ Attested কপি ফেরত পাই, ঈদের ছুটির কারনে পেতে দেরি হয়। (এখন প্রতি বৃহস্পতিবার গিয়ে জমা দিলে এক ঘন্টার ভিতর Attested করে ফেরত দেয় )। আমি ওই দিনেই জার্মানীতে কুরিয়ার করি এবং ২৩ তারিখ ব্যাংকে পৌছায়। ৭ কার্যদিবস পরে ২৩ তারিখ ই-মেইল এ এক্যাউন্ট নং পাই। এম্ব্যাসিতে সার্টিফিকেট জমা দেয়ার ডেডলাইন ছিল ২১ তারিখ এবং ইউনিভার্সিটিতে ছিল ৩১ তারিখ, আগেই তাদের সাথে ই-মেইল এ যোগাযোগ করে এক্সটেনশন নিই। ২৫ তারিখ ব্যাংক থেকে টাকা ট্রান্সফার করি, ২৮ তারিখ জার্মান ব্যাংক থেকে ই-মেইলে ব্লক এ্যাকাউন্ট সার্টিফিকেট আসে, ২৯ তারিখ এম্ব্যাসিতে জমা দেই এবং ৫ই নভেম্বর ভিসা নেয়ার জন্য ফোন করে ( আমার আগের দুজনের একজন অক্টোবরের ১৪ ও ২০ তারিখ সার্টিফিকেট জমা দেয়, তারা নভেম্বরের ৩ তারিখ ভিসা নেয়ার ফোন পায়, কারণ ছিল যিনি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কাজ করেন উনি ছুটিতে ছিলেন)।
টাকা পাঠানো নিয়ে কিছু কথাঃ
আমার আগের পোষ্ট ছিল কিভাবে জার্মানীতে ব্যাংক এ্যকাউন্ট খুলে ব্লক এক্যাউন্ট সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, আমি সেভাবেই করেছি (কোন ব্যাংক এবং কোন ব্রাঞ্চে করেছি অনুরোধ করছি জানতে চাইবেন না)। আপনারা যারা জার্মানীতে আসতে চান প্রধান সমস্যা/বাধা এখন বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানী নিয়ে। আমি উপায়/রাস্তাগুলো বলে দিচ্ছি, বাকিটা আপনাদের চেষ্টা এবং ইচ্ছা।“ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়”- এখানে সেটাই প্রযোজ্য। জার্মানিতে আসতে হলে এখন দরকার নিজের প্রবল ইচ্ছা
টাকা কিভাবে পাঠানো যাবে…?
১। ব্যাংকের AD শাখার মাধ্যমে
২। বাংলাদেশের বাইরে (দক্ষিণ এশিয়া ব্যাতীত) থেকে জার্মানিতে আপনার এক্যাউন্টেট্রান্সফার করা
৩। স্কলারশীপ
৪। হুন্ডি
১। বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকের AD শাখার মাধ্যমে টাকা পাঠানো যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে রুলস আছে ছাত্রদের জন্য সেটার মাধ্যমেই পাঠানো যাবে (আমাদের Approach জানতে হবে)।ছাত্রদের জন্য ২ টা ক্লজ (Clause)
ক) ভিসা না হলে টাকা ফেরত আসতে হবেঃ ভিসা না পেলে পাঠানো টাকা ফেরত আসতে হবে, জার্মানিতে ব্যাংকে এক্যাউন্ট খোলার ফরমের দ্বিতীয় পাতায় এটা পরিষ্কার বলা আছে।
খ) ভিসা পাওয়ার আগেই ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া (Boarding &Lodging) খরচ পাঠানো যাবে। (এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা আছে টাকা ইউনিভার্সিটির এ্যকাউন্টে পাঠাতে হবে, সেটার উত্তর হল, আপনার যেহেতু টিউশন ফি নেই তাই, ইউনিভার্সিটির এ্যকাউন্ট এখানে দরকার নেই, তাই আপনার নিজের থাকা/খাওয়ার টাকা আপনার একাউন্টেই পাঠাতে হবে)।
ব্যাংকগুলো রাজি না হওয়ার কারণ আপনারা যেকোন ব্যাংকে গিয়ে বলছেন, এম্ব্যাসিতে ব্লক এক্যাউন্ট দেখাতে বলেছে তাই জার্মানিতে টাকা পাঠাতে হবে। এম্ব্যাসিতে দেখানোর জন্য টাকা পাঠাতে হবে এ রকম কোন রুলস বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। আপনাদের বলতে হবে, আপনার নিজের এক বছরের থাকা/খাওয়ার টাকা আগেই পাঠাতে হবে এবং ভিসা না হলে এটা ফেরত আসবে।
এখন আসি ব্যাংকে সম্পর্কে কিছু কথা, ব্যাংকগুলো পরিচিত না হলে, স্টুডেন্ট ফাইল খুলে টাকা পাঠাতে চায় না, কারণ আমদানি/রপ্তানী এর কাজ করতে যে কাজ করতে হয়, স্টুডেন্ট ফাইল খুলে টাকা পাঠাতে একই কাজ করতে হয় কিন্তু এতে কমিশন কম হওয়ায় উনারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে করে না। যাদের মামা-চাচা ব্যাংকে আছেন অথবা ব্যাংকের সাথে ভাল পরিচিত আছে, তারা উনাদের মাধ্যমে চাপ দিয়ে টাকা পাঠাবেন আর কি কি রুলস আছে তাতো বলেই দিলাম।
২। যাদের আত্নীয় স্বজন দেশের বাইরে থাকেন, তারা উনাদের মাধ্যমে জার্মানিতে আপনার এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন, এখানে কোন সমস্যা নেই। টাকা কোথা থেকে আসলো সেটা কোন ব্যাপার না, টাকা আপনার এ্যাকাউন্টে জমা আছে কিনা সেটাই ব্যাপার।
৩। স্কলারশীপঃ আমরা টাকা পাঠানো নিয়ে খুবই চিন্তিত কিন্তু স্কলারশীপ নিয়ে চিন্তিত না। DAAD, Erasmus-Mundus এ সবাই এপ্লাই করেন। এছাড়া আরও কিছু স্কলারশিপ আছে আইটি বেইসড।কিছুদিন আগে একজনের পোষ্ট দেখেছিলাম সম্ভবত ফার্মেসি অথবা বায়োটেকনলজি নিয়ে, সঠিক লিঙ্কটাখুজে পাইনি তাই দিতে পারছি না। সবাই স্কলারশীপের জন্য চেষ্টা করেন। বাংলাদেশীরা এগুলোনিয়ে খুজে কম তাই তারা কম পায়, ইন্ডিয়ানরা এদিক থেকে অনেক এগিয়ে।
৪। হুন্ডিঃ এটা নিয়ে কিছু বলব না, এটা বাংলাদেশ এবং জার্মানী সহ পৃথিবীর সব দেশেই নিষিদ্ধ, কিন্তু এটার মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা ট্রান্সফার হয়।
টাকা ফেরত না পাওয়া নিয়ে ভ্রান্ত কিছুধারণাঃ
অনেকের ভ্রান্ত ধারণা যে, টাকা পাঠানোর পরে ভিসা না হলে টাকা মার যাবে, ফেরত আসবেনা, কিভাবে আসবে? তাদেরকে বলি, আপনি তৃতীয় বিশ্বের Country তে বাস করেন বলে আপনার মনে এই ভ্রান্ত ধারণা ( দুঃখিত মনে কিছু নিয়েন না)। বাংলাদেশের বাইরে গেলে বুঝবেন Green Colour এর পাসপোর্টের কি জ্বালা, সিকিউরিটি এমনভাবে তাকায় যেন আমি চোর/ফকির।বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংকে আপনি সরাসরি না গিয়ে কাউকে পাঠিয়ে দেখেনতো আপনার এ্যকাউন্ট খুলতে পারেন কিনা? কখনই পারবেন না। আর এখানে আপনাকে না দেখেই আপনার একাউন্ট খুলে দিচ্ছে, উনারা আপনাকে এতটাই বিশ্বাস করে আর আপনি অবিশ্বাস করছেন। ভিসা না হলে আপনার টাকা মার জাবার কোন সম্ভাবনাই নেই, আপনি ফেরত পাবেন। কিভাবে করতে হবে এবং কিভাবে আসবে সেটা ফরমে খুব সুন্দর করে বলা আছে কি করতে হবে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। আপনি কিছু কম পাবেন কারণ ব্যাংক তার চার্জ এবং ট্রান্সফার চার্জ কাটবে এবং Exchange Loss হলে।
এতক্ষণ যারা মনোযোগ সহকারে সময় নষ্ট করে পরেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। একমাস পর থেকে ক্লাশ শুরু করেছি, ঠিকভাবে যেন পড়াশুনা করতে পারি। এখানে মাসে একবার অন্তত একবার আপনাকে নিজের Dormitory এর Kitchen, Floor & Toilet পরিষ্কার করা লাগবে,রান্না করে খেতে হবে (রাস্তাঘাটে খাওয়ার প্রচুর দোকান কিন্তু আপনি খেতে পারবেন না)তারপর লেখাপড়া। সবশেষে উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া, উনার ইচ্ছায় সব।
যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন।তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।