যারা এই লেখার প্রথম পর্ব পড়েননি? তারা এখানে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন।
আদনান সাদেক জার্মানঃ ভিসা হয়ে গেছে, আর কয়েকদিন পরেই ফ্লাইট। বুকের মধ্যে চাপা একটা উত্তেজনা, অনেক শুনে অনেক পড়েও অচেনা রয়ে গেছে এমন দূরদেশে যাত্রা করার আগ মুহূর্তের উদ্বেগ, আশা আর স্বপ্ন দেখার সময়। চেনা দেশ, চেনা বাবা মা, আত্মীয় বন্ধুদের ফেলে চলে যেতে হবে, সবার থেকে বিদায় নেয়া, মাঝে মাঝে বুকের মধ্যে দলা পেকে উঠে একগুচ্ছ আবেগ। কেউ কেউ ফেলে আসবে সদ্য বিবাহিত জীবন সঙ্গী, এমনকি দুধের শিশুকে। একদিকে অচেনা নতুন জীবনের স্বপ্নময় হাতছানি, অন্যদিকে চেনা জগত থেকে বিদায় নেবার নাড়িচ্ছেদের বেদনা।
বিদায়ের মুহূর্তগুলো কারো কারো পেছনে, কেউ কেউ এখনও বিদায় নেবার পথে। স্বজনদের মধ্য অনেকেই বার্ধক্যে, বিদায়ের মুহূর্তে মনে হয় আবার দেখা হবে তো! বিমানবন্দরে বাতাস ভারী হয়ে আসে কান্নায়, প্রিয় মুখগুলোকে বিদায় দিতেই হবে – এই বাস্তবতা বুঝতে বুঝতে উড়ে যায় বিমান দূরের আকাশে। জানলা দিয়ে দু’চোখ মেলে দেখা চেনা শহর, চেনা মাটি – এক সময় মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে চেনা সব দৃশ্যপট, ছোট হয়ে আসতে আসতে একসময় দিগন্তে মিলিয়ে যায় চেনা দেশ, চেনা মানুষ আর চেনা সেদো মাটির গন্ধ।
প্রথম বিদেশ যাত্রা আমাদের জীবনের খুব বড় একটা ঘটনা। বিশেষ করে আমাদের দেশ ও সংস্কৃতির সাথে জার্মানির পার্থক্য এত বেশি যে এই সামান্য ভ্রমণটুকু বদলে দেয় আমাদের সমগ্র চেনা জগত। এই পার্থক্যের সবটুকুই যে খারাপ তা নয়, তবে ভালটাও এত বেশি ভাল যে সেটা বিশ্বাস হতে হতে সবাই একটু নাড়া খেয়ে যায়। জার্মানিতে এসে প্রথমে সবাই এক বড় ধরণের অনিশ্চয়তায় ভুগে, এই অনিশ্চয়তার মূল কারণ শুধুমাত্র এই দেশের কালচার আর জীবন ধারণের অনেক সহজাত বিষয়ে অজ্ঞতা কিংবা ভ্রান্ত ধারণা। এই লেখার মাধ্যমে প্রচেষ্টা থাকবে জার্মানিতে আসার পর প্রথম দিনগুলোতে নতুনদের জন্য সহজ করে তোলা যায় কিনা।
জার্মান বন্ধু
মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রাণী। বিদেশ বিদেশ করে পাগল হয়ে যায় যেই ছেলে মেয়েগুলি, ভিসা পেয়ে সবাইকে মিষ্টিমুখ করায়, বিমান ছেড়ে যাবার পর তারাই আবার চোখের পানি ফেলে। এদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বিদেশের মাটিতে নেমে প্রথমেই দেশের সবকিছু খুঁজে ফেরে। শুরু হয় প্রথমদিন থেকেই বাংলা বলা থেকে। সবাই নতুন দেশে এসেই প্রথমে খোঁজ করে বাংলাদেশী মানুষ কোথায়, কিংবা বাংলাদেশী দোকান কই! এই পর্যন্ত হলে ঠিক ছিল। সমস্যা শুরু হয় তখনই যখন সব ব্যাপারেই বাংলাদেশীদের সাথেই শুধু চলাফেরা হয়। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে, ক্লাসের পড়াশুনা, চাকরির খোঁজ, আড্ডা, দাওয়াত, উইকেন্ডে ঘুরতে যাওয়া – এইসব সমস্ত দিনের এজেন্ডায় যতকিছু করা সব জায়গায় শুধু দেশি মানুষদের সাথে চলাফেরা। নিজের দেশের মানুষের সাথে মেলামেশা নিয়ে কোন সমস্যা নেই, বরং অনেক ক্ষেত্রে নিজের দেশের মানুষদের সাহায্য না পেলে এখানে টিকে থাকাই মুশকিল হতে পারে। তবে সমস্যাটা হল “শুধুমাত্র” বাংলাদেশীদের সাথে মেশা নিয়ে।
জার্মানি সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানে কারা? তাঁরা এই দেশে অনেক বছর ধরে থাকা বাংলাদেশিরা নয়, বরং এই দেশের সাধারণ নাগরিকরা। আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা জার্মান কালচার ও তাদের চিন্তা ভাবনার জগত সম্পর্কে অজ্ঞতা। এই দুর্বলতাকে জয় করার একমাত্র উপায় হল এই দেশের সাধারণ মানুষের সাথে যতটুকু সম্ভব যোগসূত্র তৈরি করা। ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষিত জার্মানদের সাথে বন্ধুত্ব করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এদের বেশীরভাগই সাধারণত ভাল ইংরেজি বলতে পারে, অনেকেই সাহায্য করে প্রথম দিনগুলিতে সেটল হতে। এরা সাধারণত বাইরে প্রকৃতির কাছে থাকতে পছন্দ করে। খেলাধুলা করা, কন্সার্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাওয়া, জগিং, হাইকিং, সাইকেল চালানো, সাঁতারে যাওয়া -এমন অসংখ্য এবং বৈচিত্র্যময় কার্যকলাপের মধ্যে এরা এদের প্রতিটি দিনকে ভরে রাখে।
বন্ধু পেতে একটু কষ্ট করতেই হয় বৈকি। তবে আশার কথা হল, জার্মান বন্ধু যাদের হয়েছে, তারা সবাই একবাক্যে স্বীকার করে নেবে যে জার্মানরা বন্ধু হিসেবে সেরা।
ভাষা
এই দেশে আসা নতুন এমন কাউকে এখনও পর্যন্ত পাইনি যে এই অভিযোগ করেনি যে, জার্মানরা ইংরেজি বলতে চায় না! এই সমস্যা রাস্তাঘাটে বা দোকানপাটে হবেই। আমরা দুই একটা শব্দ ইংরেজি বলতে পারলে যেমন নিজেদের উঁচুপদের কিছু একটা ভেবে ফেলি, এখানে ঠিক তার উল্টা। এরা নিজেদের ভাষায় কথা বলে গর্ববোধ করে এবং একেবারে বিপাকে না পড়লে ইংরেজি বা ভিনদেশী ভাষায় কথা বলতে চায় না। জার্মানরা আমাদের সাথে ইংরেজি বলবে এটা আশা করা যাবে না। বিপদে পড়লে চলা যায় এমন কয়েকটা শব্দ সবারই মুখস্থ রাখা উচিত, কিংবা এখন মোবাইল ফোনেও অনেক অ্যাপ আছে যেখানে ব্যাসিক জার্মান শব্দের তালিকা আছে। কাউকে প্রয়োজনে কিছু জানতে চাইলে প্রথমে জার্মান ভাষায় এপ্রোচ করলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা অনেক বেশি আন্তরিকতা দেখায়। অল্প দুই একটা জার্মান শব্দ দিয়ে শুরু করলে বেশীরভাগই পরে ইংরেজিতে সুইচ করে, অন্যদিকে প্রথমেই “এক্সকিউজ মি” বলে শুরুর ফলাফল সবসময় ভাল নাও হতে পারে।
“জার্মান ভাষা খুব কঠিন” – এই অভিযোগ প্রায় সবারই। তবে এদের সবাই জার্মান শেখার পেছনে যথেষ্ট শ্রম দিয়েছে এমন মনে হয় না। ভাষা একদিনে শেখা যায় না, এর জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়। ভাষা কঠিন না সহজ এই তুলনা অবান্তর। জার্মানিতে জার্মান ভাষার কোন অলটারনেটিভ নেই যে একটা কঠিন হলে অন্যটা শিখে নিলেই হবে – এমনটা সম্ভব। ভাষা শেখা শুরু হতে পারে প্রথম দিন থেকেই, এবং এর চর্চা চলতে থাকতে হবে নিজের অজান্তেই। ভাষা আসলে শেখার জিনিস নয়। তোমাদের দৈনন্দিন রুটিনে যদি ভাষার জন্য ১টি মাত্র এক্টিভিটি থাকে তাহলে ছয় মাসের মধ্যে কাজ চালানোর মতন ভাষা শেখা সম্ভব। এই এক্টিভিটির উদাহরণ হতে পারে, জার্মান বন্ধুর সাথে হাঁটতে বের হওয়া, কিচেনে রান্না করার সময় জার্মানে কথা বলা, টিভি বা রেডিও শোনা, বাইরে ডিকশনারি হাঁতে নিয়ে একা হাঁটতে বেরিয়ে যতগুলো জিনিস আশে পাশে দেখা যায় তাদের একটা তালিকা তৈরি করা। এমন অসংখ্য উপায় আছে কঠিন ভাষাকে সহজ করে শিখে নেবার। সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা প্রায় সবার মধ্যে দেখা যায়, সেটা হল শেখার ইচ্ছে এবং প্রতিদিন নিয়ম করে অনুশীলনের অভাব।
খাদ্যাভ্যাস
বিদেশে এসে বাঙ্গালী পুরুষ প্রথম উপলব্ধি করে, দেশের মাটিতে মা, বোন ও অন্যান্য রমণীকুল তাদের জীবন কত সহজ করে রেখেছিল। প্রথম রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ানো, অর্ধ পোড়া ডিম ভাজি, প্রতি বেলায় প্রায় একই মেনু, সব রান্নায় প্রায় একই মসলা – এইসব অনেক এডভেঞ্চার দিয়ে এদের বিদেশ জীবন শুরু হয়। বিদেশে আর যাই হোক দেশি খাবার আর মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পাওয়া যাবে না – এই বাস্তবতা মানতে মানতে বেশীরভাগ ছেলেপেলের হালুয়া টাইট। তবে অনেকেই আবার দ্রুত দেশি রান্নায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে নেয় অল্প সময়ের মধ্যে। এদের কল্যাণে স্টুডেন্ট হোস্টেলের ত্রিসীমানায় ঢুকতেই বাঙালী রান্না ও মশলার মৌ মৌ গন্ধ পাওয়া যায়।
বাস্তবতা হল, বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বড় শত্রু আমাদের এই খাদ্যাভ্যাস! এর কারণ ব্যাখ্যা করার একটা চেষ্টা করা যাক।
আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আমাদের খাবার খুবই সুস্বাদু এবং এই স্বাদ একবার মুখে লেগে গেলে অন্য আর কোন খাবারই পছন্দ হতে চায় না। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু সমস্যা শুরু হয় সেই খাবারের রন্ধন পর্ব থেকে। চোখের জল ফেলে পেঁয়াজ কেটে, সেই পেঁয়াজ অনেক সময় ধরে ভুনা না করলে আসল খাবারের স্বাদ হয় না। ফলাফল হল প্রচুর সময় ব্যয়! শুধু রান্না নয়, রান্নার পর ঝোল তেলের দাগ তুলতেও চলে যায় দিনের অনেকটা সময়। আর পেটভরে ভাত খাবার পর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে পড়ার টেবিলে বসার আগেই পায় ঘুম। সেই ঘুম ভাঙতে চলে আসে পড়ার বেলার রান্নার সময়। একটু হয়তো বেশি বলা হয়ে গেল, তবে মদ্দা কথা হল আমাদের রান্নার পাশাপাশি রেডিমেড খাবারে অভ্যাস করাটা অতীব জরুরী। স্বাদের পাশাপাশি সময়কে গুরুত্ব দেওয়াও দরকার। বিশেষ করে ছাত্রাবস্থায় প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই মূল্যবান সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় না করলে পরে পস্তাতে হবে।
ইন্টারনেট
জার্মানিতে পড়াশোনা করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া ইন্টারনেট নয়, বরং এটা হল লাইব্রেরী। তারপরও এই কলামের শিরোনাম লাইব্রেরী না হয়ে ইন্টারনেট, কারণ জার্মানিতে এসে আমাদের ছেলে পেলেরা সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ট করে ইন্টারনেটে বসে। অহেতুক ফেসবুক ব্যবহার, পড়ার সাথে কোনরকম সম্পর্ক নেই এমন সাইটে ব্রাউজ করা, মুভি ডাউন লোড বা ইউটিউবে বিনোদন – প্রতিদিনকার মহা মূল্যবান সময়ের বেশীরভাগ অপচয় হয় নেটে বসে।
ইন্টারনেট আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য, তবে এর পর্যাপ্ত ব্যবহার না করলে শাপে বর হবার সম্ভাবনাই বেশি। আরও কয়েকটি ব্যাপার মনে রাখা দরকার।
১ জার্মানিতে এসে হাই স্পীড নেটওয়ার্ক পেয়ে সবাই প্রথমে মুভি ডাউন লোড করা শুরু করে। শুধু মুভি নয়, এমপিথ্রি, স্ট্রিমিং করে খেলা দেখা ইত্যাদি সকল প্রকার কপিরাইট ডাউন লোড জার্মানিতে আইনত নিষিদ্ধ। এর কোন ব্যতিক্রম নেই। অনেক প্রাইভেট উকিল ও সংস্থা এই আইনের সুযোগ নিয়ে সমগ্র জার্মানির নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ করে এবং বাছাইকৃত ভাবে বেআইনি ভাবে ডাউন লোড করা আইপি ট্র্যাক করে ব্যবহারকারীদের ঠিকানায় মোটা অংকের ফাইন পাঠায়। এই ফাইনের পরিমাণ প্রতি ডাউন লোডের জন্য ৩০০ থেকে ১০০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।
২ নতুন আসার পরই সবার মধ্যে ছবি তোলার একটা ঢল নামে, এবং সেইসব ছবি খুব দ্রুত ফেইসবুকে পাবলিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। জার্মানিতে নিজের ব্যতীত অন্য কারো ছবি নেটে আপলোড করা বেআইনি।
৩ অনেকেই না বুঝে নেটে ই-বে বা অন্যান্য সাইটে খুব সস্তা অফার পেয়ে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স জিনিস কিনে ফেলে। কিংবা অতি উৎসাহী কেউ হয়তো না বুঝেই কোন কন্ট্রাক্টে একসেপ্ট ক্লিক করে। এইসব কন্ট্রাক্ট থেকে পরবর্তীতে মোটা অংকের জরিমানা আসতে পারে। সাধু সাবধান।
৪ কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা। একটা বাঙালি ছেলের পিসিতে একটা ভাইরাস জাতীয় ফ্রি সফটওয়্যার ইন্সটলের পর তার ব্যাংকের পিন নম্বর ও ট্যান নম্বর দিয়ে প্রায় ১৫০০ ইউরো অন্য দেশের একাউন্টে ট্রান্সফার করে নিয়েছিল এক হ্যাকার। সেই টাকার মাত্র ৫০০ ইউরো ফেরত পাওয়া গিয়েছিল, বাকিটা আর পাওয়া যায় নি। পিসিতে অবশ্যই আপডেটেড এন্টি-ভাইরাস ও ফায়ারওয়াল সফটওয়্যার ইন্সটল থাকা উচিত।
খেলাধুলা
বিদেশের মাটিতে অনেক ব্যাস্ততার মধ্যে অবসর থাকবে, জীবন মানে শুধুই পড়াশোনা নয়। জার্মানরা খেলাধুলা প্রিয় জাতি। শুধু ফুটবল নয়, প্রতিটা ইউনিভার্সিটিতে অন্তত পঞ্চাশ রকম খেলাধুলার সুযোগ থাকে। দেশে মাঠ নেই বলে যারা শুধু পিসিতে গেমস বা অবসরে কার্ড খেলে কাটিয়েছে, তাদের জন্য এখানে রয়েছে সবুজ গালিচা পাতা মাঠের সারি। জার্মান বন্ধু পেতে, ভাষা শিখতে অবসরে কোন না কোন স্পোর্টস ক্লাবের সাথে জড়িত থাকা খুব কাজে দিতে পারে। এই দেশের মানুষদের কাছে আসার জন্য খেলাধুলার আর সহজ কোন উপায় নেই। এমনকি এখানকার কোন ক্লাবে সদস্য থাকলে পরবর্তিতে এখানে পার্মানেন্ট ভিসা বা নাগরিকত্ব পেতে সুবিধে হয়।
বিদেশের মাটিতে প্রথম দিনগুলো সহজ নয়। নিয়ম ছাড়ার দেশ থেকে এসে হঠাত করে অসংখ্য নিয়মের দেশে এসে সবাই এক ধরণের অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। এই বুঝি কিছু ভুল করলাম, এই বুঝি আইন ভাঙলাম – এমন একটা দোদুল্যমনতায় চলে প্রতিটি পদক্ষেপ। এর সাথে দেশের ফেলে আসা প্রিয়জনের মুখ, পরিচিত বন্ধুদের সাথে আড্ডা, পরিচিত গলির মোড়ের চা-দোকান – এইসব মিলিয়ে বড়ই বেদনাময় কাটে প্রথম দিনগুলি। এই দিনগুলিতে সবাই পাশে ফেরে সাহায্যের খোজে, কারো মেলে, কারো মেলে না। যেটা অনেকেই ভুলে যায়, সেটা হল দেশ থেকে আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসা আত্মপ্রত্যয়, বুকের মধ্যে চাপা থাকা বিশ্বজয় করার প্রত্যাশা। বিদেশ যাব, নিজেকে গড়ব, নতুন করে জীবনকে চিনব, দেশের অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জনদের একসময় অসম্ভবকে জয় করার খবর জানাবো – এই চাপা আগুনগুলো থমকে যেতে থাকে অপরিচিত দেশের অপরিচিত পরিবেশে এসে।
আমরা পৃথিবীর গরিব একটি দেশের নাগরিক, এই দেশের মাত্র হাতেগোনা আমাদের মতন অল্প কিছু সৌভাগ্যবানদের কপালে জোটে আদৌ বাইরে পড়তে যাওয়ার দুর্লভ সুযোগ। বিদেশের সব ভালোর জগতে এসে দেশের নাম উজ্জ্বল করার অদৃশ্য দায়ভার তাই চলে আসে আমাদেরই মতন বিদেশগামীদের কাঁধে। আমাদেরকে দেখেই আশেপাশের অন্যান্য দেশের ছাত্রছাত্রীরা চিনবে প্রথমবারের মতন বাংলাদেশীদের সাথে। আমাদের সময়ানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, সততা, কমিটমেন্ট –এইসব দোষগুণ দেখে অন্য দেশের ছেলেমেয়েরা জানবে বাংলাদেশের মানুষকে। যারা নিজকে ভালবাসার পাশাপাশি দেশকে ভালবাসে, যারা নিজের জীবনের সাফল্যের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করতে পারে, তাদের জন্য বিদেশের প্রথমদিককার কঠিন সময় কঠিন মনে হবার কথা নয়।
শুধু মনে রেখ, আমরা আমাদের চেনা জগত ত্যাগ করে এই দেশে পাড়ি দিয়েছি উচ্চশিক্ষার জন্য। আমাদের অনেকের আরও অনেক ছোট ছোট লক্ষ্যের মধ্যে এই উচ্চশিক্ষাই মূল উদ্দেশ্য এবং আমাদের প্রতিদিনের সময়ের বেশীরভাগ যেন সেই খাতেই ব্যয় হয়। শুধুমাত্র এই একটি প্রত্যয় ও তার সঠিক প্রয়োগ তোমাদের সকল প্রতিকূলতা দূর করে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট।
এই লেখার গত পর্বে যেতে এখানে ক্লিক করুণ ************* এবং পরবর্তী পর্বে যেতে এখানে ক্লিক করুণ।
আর যারা আপনাদের ফেসবুকে আমাদের সাইটের প্রতিটি লেখা পেতে চান তারা এখানে ক্লিক করে আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে আমিওপারিতে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।
zarma visa sageshon.