বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর নিপীড়নের কিছু ঘটনার জের ধরে জার্মানিতে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ অবকাঠামোর উন্নয়ন ও আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে নীতি পরিবর্তনের দাবিও উঠছে৷
সিরিয়া, ইরাক সহ বিভিন্ন দেশের মানুষ সংকটে পড়ে বাধ্য হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় খুঁজছেন৷ অনেকে আবার অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছাড়ছেন সৌভাগ্যের খোঁজে৷ ইদানিং সেই সংখ্যাটা বেশ বেড়ে গেছে৷ ফলে জার্মানির মতো অনেক শিল্পোন্নত দেশে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে৷ আবেদন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার আগে তাদের জন্য সাময়িক বসবাসের ব্যবস্থা করতে হয়৷ কিন্তু বর্তমান অবকাঠামো প্রায়ই সেই চাপ সামলাতে পারছে না৷ ফলে ঘটছে নানা অপ্রিয় ঘটনা৷ জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়ায় এমনই এক কেলেঙ্কারি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে৷ এই প্রেক্ষাপটে বিরোধীরা বিদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের সম্পর্কে নীতির পুনর্মূল্যায়নের ডাক দিচ্ছে৷
গত সপ্তাহে বুয়রবাখ নামের এক ছোট্ট শহরে আশ্রয়প্রার্থীদের একটি কেন্দ্রে ঘটনাটি এক স্থানীয় সাংবাদিকের চোখে পড়ে৷ তিনি একটি ডিভিডি হাতে পান, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কী ভাবে রক্ষীরা এক বিদেশি আশ্রয়প্রার্থীর উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে৷ এক রক্ষীর মোবাইল ফোনে তোলা ছবিতে আরও এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যায়৷ মেঝেতে পড়ে থাকা হাতকড়া পরা এক রিফিউজির গলায় পা দিয়ে ঠেলছে এক রক্ষী৷ সারা রাজ্যে মোট তিনটি কেন্দ্রে নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে৷
এমন দৃশ্য ইরাকের কুখ্যাত আবু ঘ্রাইব কারাগারের কেলেঙ্কারির কথা মনে করিয়ে দেয়৷ সেখানেও বন্দিদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়েছিলো৷ ইরাকে শুধু মার্কিন সৈন্য নয়, অনেক মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীও মোতায়েন করা হয়েছিলো৷ জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যেও এমন বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার হাতে আশ্রয়প্রার্থী কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে৷ তারাও আবার অন্য কিছু বেসরকারি সংস্থাকে নিয়োগ করেছে৷
এই অবস্থায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাল্ফ ইয়েগার প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন৷ নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের বদলে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ এই অবস্থায় তিনি গোটা অঞ্চলের সব অ্যাসাইলাম সেন্টারে নিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মীদের ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’-এর নির্দেশ দিয়েছেন৷ আরও বলেছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের নিপীড়ন কোনো অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না৷ তিনি সরাসরি বিদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন৷
এদিকে মিউনিখে আশ্রয়প্রার্থীদের এক কেন্দ্র পরিদর্শন করে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের বলেছেন, সেখানকার পরিস্থিতিও বেশ কঠিন৷ আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা আচমকা বেড়ে যাওয়ায় এমন কিছু সাময়িক সমস্যা দেখা যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে নিরাপত্তা কর্মীদের আচরণের তীব্র নিন্দা করেন তিনি৷
এসবি / জেডএইচ (ডিপিএ, এপি, ইপিডি)