• Fri. Nov ২২, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে গ্রীসের রক্তচোষা ‘মাস্তুরা’ প্রতারক টিপু

ByLesar

Sep 9, 2014

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বিলেতের বহুল প্রচারিত পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সংখ্যায় Greece’s migrant fruit pickers: ‘They kept firing. There was blood everywhere’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গুলিবর্ষন ঘটনার ১৬ মাস পর ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর গ্রীস সংবাদদাতা হেলেনা স্মিথের বিশাল এই প্রতিবেদনে নতুন কোন তথ্য না এলেও স্ট্রবেরি খামারের নিরীহ শ্রমিকদের কাছ থেকে হাজার হাজার ইউরো হাতিয়ে নেয়া বাংলাদেশি এক প্রতারককে ‘নিরীহ ভিক্টিম’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘নেয়া মানোলাদা’ এলাকার বহু বাংলাদেশির কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী ‘ভিলেন’ টিপু চৌধুরীকে রীতিমতো ‘হিরো’ বানাবার অপচেষ্টার পেছনে এথেন্সে গার্ডিয়ান প্রতিনিধি হেলেনা স্মিথের চোখে ধুলো দেয়া হয় অত্যন্ত সুকৌশলে। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলা থেকে বছর সাতেক আগে গ্রীসে আগমন এই টিপু চৌধুরির। গত বছর এপ্রিলে রক্তাক্ত ঘটনার সময় ‘নেয়া মানোলাদা’ এলাকাতেই অবস্থান ছিলো তার।

রক্তচোষা ‘মাস্তুরা’ হিসেবে টিপুর বেশ নামডাক ছিলো দুর্ঘটনার বেশ আগে থেকেই। গ্রীক μάστορας (মাস্তুরা) শব্দের শাব্দিক বাংলা অনুবাদ বা আভিধানিক অর্থ ‘কারিগর’ হলেও গ্রীসের স্ট্রবেরি খামারগুলোতে ‘অপকর্মের কারিগর’ এক শ্রেনীর অসাধু সুপারভাইজার ‘মাস্তুরা’ নামে পরিচিত ছিলো বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, শোষনের কারিগর ঐসব তথাকথিত সুপারভাইজার নামক ‘মাস্তুরা’রা কিন্তু ছিল যথারীতি বাংলাদেশেরই।

স্ট্রবেরি খামারের গ্রীক মালিকদের সাথে অলিখিত ও অবৈধ বোঝাপড়ার মাধ্যমে তারা বছরের পর বছর গিনিপিগ বানিয়ে রাখতো নিরীহ বাংলাদেশিদের। রক্তচোষা ‘মাস্তুরা’রা শোষনের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতো শ্রমিকদের লক্ষ লক্ষ ইউরো। খামারে একদিকে শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম, অন্যদিকে দিন হিসেবে বেতন, যা পেতে হতো ‘মাস্তুরা’র হাত থেকে। একেকজন ‘মাস্তুরা’র অধীনে শ্রমিক থাকতো ২৫ থেকে ২০০ জন।

মালিকের কাছ থেকে ‘মাস্তুরা’ তার অধীনস্ত শ্রমিকপ্রতি দৈনিক ২৫ ইউরো নিলেও এর মধ্য থেকে নিজের পকেটে ভরতো জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ ইউরো। অধীনস্ত শ্রমিকদের ‘মাস্তুরা’ বাধ্য করতো নিজস্ব ম্যাসে থাকতে। এখানেই শেষ নয়, কলিং কার্ড বা সিগারেটটিও ‘মাস্তুরা’র কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে কিনতো হতো সবার। প্রায়শঃই মালিকের কাছ থেকে ১৫ দিন বা এক মাসের বেতন উঠিয়ে অসাধু মাস্তুরা তা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতো, ফলে অনেক সময় মাসের পর মাস আটকে যেতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শ্রমিকদের বেতন।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপর নেমে আসতো নির্যাতনের খড়গ। সুচতুর ‘মাস্তুরা’ নিজস্ব ম্যাসে বা গ্রুপে তার বিশ্বস্ত কয়েকজন লোককে বাড়তি সুবিধা দিয়ে বিনামূল্যে লালন-পালন করতো বাকিদের শায়েস্তা করতে। গত বছর অক্টোবরে যেদিন নেয়া মানোলাদাতে আহত বাংলাদেশিদের হাতে ‘স্টে পারমিট’ তুলে দেয়া হয়, ঠিক সেদিনই শতশত লোকের উপস্থিতিকে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের সামনে হাজির করা হয় প্রতারক ‘মাস্তুরা’ টিপু চৌধুরিকে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত এই প্রতিবেদক স্বচক্ষে অবলোকন করেন টিপু চৌধুরির উপর প্রতারিত শ্রমিকদের তীব্র ক্ষোভ, যাঁরা তার কাছে পাওনা ছিল ঐ সময় ২০ হাজার ইউরোর বেশি। বিগত বছরগুলোতে গ্রীসে স্ট্রবেরি খামারের শীর্ষ ‘মাস্তুরা’দের অন্যতম এই টিপু চৌধুরি, যার চরিত্রে এখন ‘ধোয়া তুলসী পাতা’র প্রলেপ লাগাবার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর গ্রীস সংবাদদাতাকে ম্যানেজ করে।

মানবাধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে সুদীর্ঘ প্রতিবেদন তৈরী করতে গিয়ে হেলেনা স্মিথের জানার সুযোগ হয়নি টিপু চৌধুরির অতীত-বর্তমান। গ্রীসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের ‘জিরো টলারেন্স’ এবং ‘নেয়া মানোলাদা’র প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতায় রক্তচোষা ‘মাস্তুরা’দের রামরাজত্বের আজ অনেকটাই অবসান হলেও টিপুর মতো প্রতারকরা কিন্তু থেমে নেই।

পুরনো হাজার হাজার ইউরো ফেরত দেয়া দূরের কথা, স্ট্রবেরি খামারে কাগজপত্রবিহীন অবৈধ বাংলাদেশিরা যাঁরা এখনো কাজ করছেন, তাঁদের অনেকের কাছ থেকে টিপু চলতি বছর কয়েক হাজার ইউরো হাতিয়ে নিয়েছে ‘স্টে পারমিট’ পাইয়ে দেবার কথা বলে। প্রতারনা ও শোষনের আধিপত্য বজায় রাখতে টিপুর মতো কুখ্যাত এইসব ‘মাস্তুরা’ চক্র ব্যবহার করতো এবং এখনো করছে রাজধানী এথেন্সের বাংলাদেশি কিছু মুখচেনা নেতাদের।

তথাকথিত এই শ্রেনীর নেতারা সময়ে সময়ে মাস্তুরাদের শোষনকৃত অর্থের ভাগ বাটোয়ারায় অংশীদার হতো এবং এখনো হচ্ছে। ঐ নেতাদেরই একজন যিনি একসময় ছিলেন এথেন্সের কুখ্যাত ‘কুড়াল পার্টি’র সর্দার, তিনি তার ব্যক্তিগত ও আঞ্চলিক স্বার্থে প্রতারক টিপুকে ‘প্রটেকশন’ দিতে গার্ডিয়ানের মতো পত্রিকাকে সূক্ষ্য ব্ল্যাকমেইল করেছেন অত্যন্ত সফলভাবে। টিপুর সাথে তার কালো টাকার পাইপলাইন ক্লিয়ার রাখতে তিনি ব্রিটিশ পত্রিকার ইমেজকে যেমন কাজে লাগিয়েছেন, তেমনি বলি দিয়েছেন গার্ডিয়ান প্রতিনিধি হেলেনা স্মিথকেও।

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার লিংক :
http://www.theguardian.com/world/2014/sep/01/greece-migrant-fruit-pickers-shot-they-kept-firing

Lesar

আমিওপারি নিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত একজন সাধারণ মানুষ। যদি কোন বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে ফেসবুকে পাবেন এই লিঙ্কে https://www.facebook.com/lesar.hm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version