মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুরিকান্দি গ্রামের জাহেদের পারিবারিক সূত্রের বরাদ দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ইতিমধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হলেও অজ্ঞাত থেকে যায় হত্যাকান্ডের মোটিভ। বানিজ্যিক রাজধানী সাও পাওলো থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরবর্তী পারানাতে যে পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিত জাহেদ কাজ করতেন, সেখানকার একাধিক সূত্র গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ভয়াবহ প্রতিহিংসার কথা বৃহষ্পতিবার এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে। নারীঘটিত আলামত পাবার বিষয় উল্লেখ করে ইতিমধ্যে স্থানীয় টিভিতে ফলাও করে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।
গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা উইলসন হেনরিক্স বলেন, পরিত্যক্ত স্থানটি থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় নিহত জাহিদের লাশ তারা উদ্ধার করেছেন এবং মুখমন্ডল সহ শরীরে কয়েকটি স্থানে লালচে দাগ ব্যতীত অন্য কোন আঘাতের চিহ্ন তারা পাননি। শ্বাসরোধেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছে পারানা পুলিশ। পরিত্যক্ত স্থানটি থেকে বড় একটি খালি লাগেজও উদ্ধার করা হয়। ব্রাজিলের আইন অনুযায়ি নিকট আত্মীয় ব্যতীত অন্য কারো কাছে মরদেহ হস্তান্তরের বিধান না থাকায় পারানার লন্দ্রিনা এলাকায় জানাজা পরবর্তী দাফন সম্পন্ন হয় জাহেদের।
জোর পুলিশী তদন্ত চলছে, তবে প্যারাগুয়ের সীমান্তবর্তী অপরাধপ্রবণ এই অঞ্চলটিতে হরহামেশা খুনখারাবি লেগে থাকার পরিণতিতে সময়ের ব্যবধানে চাপা পড়ে যাবে দুঃখজনক এই হত্যাকান্ড, এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীদের কয়েকজন। কিছুদিন আগে এই পারানাতেই মারিঙ্গা এলাকায় খুন হন আরেক বাংলাদেশি। আগেকার ঐ হত্যাকান্ডের সাথে জাহেদ খুন হবার কোন যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পারানার গোয়েন্দা বিভাগ।
এদিকে শনিবার রাতে জাহেদ খুন হবার দু’দিনের মাথায় ৩০ জুন পারানাতেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সিলেটেরই গোলাপগঞ্জের সুহেল আহমেদ। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, পারানার অন্তর্ভুক্ত লন্দ্রিনা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে রোলান্দিয়া এলাকার সান ফেরনান্দোতে সোমবার রাত ন’টার দিকে মাথায় গুলি লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম গুরুতর আহত অবস্থায় সুহেলকে উদ্ধার করে সান রাফায়েল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা এখনো আশংকাজনক।
জাহেদ খুন হবার পর ঢাকার জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর বরাত দিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদে বলা হয়, জীবিকার সন্ধানের পাশাপাশি এক বান্ধবীর ডাকে ব্রাজিল যান জাহেদ। বান্ধবীর ডাকে বা আমন্ত্রণে সিলেট থেকে পারানা গমন করার বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে ব্যাপক অনুসন্ধানে। ১০ লাখ টাকা খরচায় জাহেদের ব্রাজিল আসার বিষয়টি সত্য হলেও আদ্যোপান্ত অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অপরাপর বাংলাদেশিদের অনেক অনেক অজানা তথ্য।
জীবিকার সন্ধানে জাহেদের মতো আরো হাজার চারেক বাংলা মায়ের সন্তান আজ ব্রাজিলে। তাদের প্রায় সবাইকেই ৮-১০ লাখ এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ১২-১৪ লাখ টাকাও পরিশোধ করতে হয়েছে দালালদের, দেশ থেকে দেশে সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ব্রাজিলে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অর্ধেকের বেশিই নবাগত। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, পতিতাবৃত্তি যেদেশে শতভাগ বৈধ এমন এক ভূখন্ডে তথা আজকের দুনিয়ার সবচাইতে ‘সেক্স ফ্রি কান্ট্রি’ ব্রাজিলের মাটিতে পা দেবার অল্প দিনের মধ্যেই নবাগত বাংলাদেশিদের একটা বিশাল অংশই আত্মহারা হয়েছেন অবাধ যৌনতায়।
পারিবারিক বা ধর্মীয় মূল্যবোধ ধুলোয় মিশিয়ে ব্রাজিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের কাছেই সেক্স এখন সিগ্রেট-বিয়ারের চাইতেও সহজসাধ্য সহজলভ্য। যত্রতত্র যখন তখন যে কাউকে যে কোন কন্ডিশনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা পারানা, পোর্তো আলেগ্রো, সাও পাওলো সহ ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, নবাগত বাংলাদেশিদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭-৮ জনই এখন ঐ পথে হাঁটছেন সাম্বা নৃত্যের দেশে। কোথাও কোথাও ‘আউট অব ক্লাস’ হয়ে পড়ছেন অনেকে।
বহু ঘটন-অঘটনের মাঝে পোর্তো আলেগ্রোর একটি ঘটনা এখন বাংলাদেশিদেরই মুখে মুখে। মেস করে একই বাসায় থাকেন এমন বাংলাদেশি ব্যাচেলরদের একটি গ্রুপ রাস্তা থেকে একজনকে চুক্তি করে বাসায় নিয়ে আসার পর বুঝতে পারে ঐ সুন্দরী আসলে হিজড়া সম্প্রদায়ের। দেশটিতে বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ার সুবাদে একদিকে যেমন দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যৌনতার সাগরে গা ভাসিয়ে দেবার প্রবণতা, পাশাপাশি সময়ে সময়ে ঘটে যাওয়া সব কিছুই কমিউনিটিতে প্রকাশও হয়ে যাচ্ছে দ্রুত।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, কোন রকম বাছ বিচার ছাড়াই ফ্রি সেক্সে মিশে গিয়ে দেশটির বাংলাদেশিরা আজ জড়িয়ে পড়ছে রকমারি সব সেক্স ক্রাইমে। এর সাথে ধীরে ধীরে যোগ হতে শুরু করেছে মাদক সংক্রান্ত আরো ভয়াবহ বিষয়াদি। নৈতিকতায় ধ্বস নামা বাংলাদেশি একটি বড় জনগোষ্ঠির উল্লেখযোগ্য অংশ আবার বিভিন্ন শহরে ইদানিং লিপ্ত হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কামড়াকামড়িতে। একই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশিদের টানাহেচড়াটি অবশ্য ঘটছে ভিনদেশি যুবকদের সাথে। ইউরোপিয়ানদের তুলনায় অনেক সহজ সরল মনের সাদাসিধে ব্রাজিলিয়ান মেয়েরা কখনো কখনো ভিনদেশী যুবকদের প্রতারণারও শিকার হচ্ছে।
ইউনিক গার্লফ্রেন্ডের ওপর কর্তৃত্ব জাহির করার দৌড়ে একে অপরকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে শাসানো ব্রাজিলে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। বাংলাদেশিরা জড়িত ছিলেন বিগত দিনে এমন বেশ কিছু অঘটন ঘটতে গিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা হলেও পারানায় এ যাত্রায় সেই সেক্স ক্রাইমেরই বলি হয়ে গেলেন জাহেদ আহমেদ। সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন নিয়ে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে আসা সদা হাসিখুশি প্রাণচঞ্চল যুবক জাহেদের পরিণতি যাতে আর কারো না হয় বিদেশ বিভুঁইয়ে, এমন আশাবাদ জাহেদের কর্মস্থলের লোকজনেরই।