ফরাসী স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন প্যারিসের আইফেল টাওয়ার। আপনি কি জানেন, প্রথম দিকে প্যারিসের অধিবাসীরা মোটেও পছন্দ করেনি টাওয়ারটিকে? দুই বছর দুই মাস পাঁচ দিন ধরে নির্মিত আইফেল টাওয়ার উদ্বোধন করা হয় প্রায় ১২৫ বছর আগে। বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে এ লেখায় থাকছে আইফেল টাওয়ারের ১৩টি তথ্য।
১. গুস্তাভ আইফেল এ টাওয়ারে আগ্রহী ছিলেন না-ফরাসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার গুস্তাভ আইফেলের নাম অনুসারে আইফেল টাওয়ারের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু এ টাওয়ার নির্মাণের জন্য আইফেল তেমন আগ্রহী ছিলেন না। দুজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মরিস কোয়েচিন ও এমিল নউগুইয়ার এর ডিজাইন করেন।
২. সংখ্যার ভিত্তিতে আইফেল টাওয়ার-৩০০ কর্মী এ টাওয়ার নির্মাণে জড়িত ছিলেন। তারা ১৮,০৩৮ টুকরো রট আয়রন ও ২৫ লাখ নাটবল্টু সংযোজন করেন। নির্মাণ শেষে এর ওজন দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার টন এবং এটি ৯৮৪.২৫ ফুট উঁচু
৩. টাওয়ারটি তৎকালীন বিজ্ঞানের মাইলফলক-আইফেল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা শুধু আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সৃষ্টি নয় এটা এ শতাব্দীর শিল্প ও বিজ্ঞানের নিদর্শন।’ এ টাওয়ারটি নির্মাণের সময় আরেকটি প্রযুক্তিও ভ্রুণ পর্যায়ে ছিল- ফটোগ্রাফি। টাওয়ারটি নির্মাণের সময় বহু ফটোগ্রাফার এর নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি তুলে রাখেন।
৪. নির্মাণের সময় এটি ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনা-১৯৩০ সালে নিউ ইয়র্কের ক্রিসলার বিল্ডিং তৈরি হলে তার উচ্চতা দাঁড়ায় ১,০৪৬ ফুট। তার আগ পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনা ছিল আইফেল টাওয়ার।
৫. প্রথমে টাওয়ারের লিফট সচল ছিল না-আইফেল টাওয়ারে ১৮৮৯ সালের ৬ মে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় ৩০ হাজার দর্শনার্থীকে ১,৭১০টি ধাপ পার হয়ে শীর্ষে পৌঁছাতে হয়।
৬. প্যারিসের অধিবাসীরা টাওয়ারটিকে গ্রহণ করেননি-নির্মাণের পরে উঁচু এ টাওয়ারটিকে প্যারিসের অধিবাসীরা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন বলে গ্রহণ করেননি বরং অনেকে চক্ষুশূল হিসেবেই অভিহিত করেছিলেন। সে সময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাঠকদের পাঠানো চিঠিপত্রে দেখা যায়, তারা একে শহরটির অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করছিলেন। এছাড়া একদল শিল্পী টাওয়ারটি নির্মাণ পরিকল্পনা নাকচ করে দিয়েছিলেন।
৭. ঋতুর ভিত্তিতে এর উচ্চতা পরিবর্তিত হয়-রট আয়রন দিয়ে নির্মিত হওয়ার কারণে টাওয়ারটির ধাতব পদার্থ বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড়-ছোট হয়। গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়লে এর আকার বেড়ে যায় প্রায় ৬.৭৫ ইঞ্চি।
৮. মাত্র ২০ বছরের জন্য নির্মিত হয়েছিল টাওয়ারটি-নির্মাণকালীন পরিকল্পনায় টাওয়ারটি নির্মিত হয়েছিল ২০ বছরের জন্য। কিন্তু ফরাসি সামরিক বাহিনী ও সরকার এটি রেডিও যোগাযোগের জন্য একে ব্যবহার শুরু করে। ১৯০৯ সালে প্যারিস শহরটি একে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
৯. নানা ঘটনার সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে টাওয়ারটি-প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ টাওয়ারটি বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্যারিসে নাৎসি বাহিনীর আগমনের আগে এর লিফটের তার কেটে দিয়েছিল মিত্রবাহিনী। নাৎসিরা যেন টাওয়ারটি ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা ফিরে আসার পরে সেটি আবার ঠিক করা হয়েছিল। টাওয়ারটির সর্বোচ্চ তলায় একবার আগুন লেগেছিল। প্রায় ২৫ কোটি মানুষ এ টাওয়ারটির উপর উঠেছে।
১০. টাওয়ারটিতে কোনা নির্দিষ্ট রং ব্যবহার করা হয়নি-আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করার জন্য টাওয়ারটির উপরের অংশে কিছুটা গাঢ় রং ব্যবহার করা হয়। তবে নিচের দিকে ক্রমান্বয়ে হালকা রং ব্যবহার করা হয়।
১১. এতে ব্যবহৃত হয় ৬০ টন রং- টাওয়ারটি রক্ষা করার জন্য প্রতি সাত বছর পর পর রং করা হয়। এতে ৫০ থেকে ৬০ টন রং ব্যবহার করা হয়।
১২. এটা শুধু পর্যটনকেন্দ্রই নয়-আইফেল টাওয়ারে একটি সংবাদপত্র অফিস আছে। এছাড়াও এতে রয়েছে পোস্ট অফিস, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার ও একটা থিয়েটার। আইফেল টাওয়ারের প্রথম তলাটি প্রত্যেক বছর আইস রিংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
১৩. অর্থের বিনিময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী আসে এখানে-অর্থের বিনিময়ে দেখা স্থাপনার শীর্ষে রয়েছে আইফেল টাওয়ার। অন্য স্থাপনাগুলোর তুলনায় এখানে প্রতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী অর্থের বিনিময়ে দেখতে আসে। প্রতি বছর এ টাওয়ার দেখতে প্রায় ৭০ লাখ দর্শনার্থী আসে, যাদের ৭৫ ভাগই আসে বিদেশ থেকে।