তাহমিনা ইয়াসমিন শশী, ইতালি থেকেঃ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ভেনিস বাংলা স্কুল আয়োজন করে একটি ত্রিমাতৃক বিজয় উৎসব। ইতালির জলকন্যা ভেনিস নগরের মেসত্রেয় আয়োজিত এ উৎসবের প্রথমে ছিল প্রবাসীদের জীবন ঘনিষ্ট ছায়াছবি ১৮+ এর প্রদর্শনী। এর পর বিজয়ের আলোচনা এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিন স্তরের অনুষ্ঠানটি ছিল মোহণীয় এবং হৃদয়গ্রাহী। দর্শক শ্রোতার উপস্থিতিও ছিল উপচে পড়া।
প্রবাসী তরুণ এবং মেধাবী পরিচালক কাজী টিপু পরিচালিত ১৮+ ছবিটি প্রদর্শীত হয় সিনেমা দান্তের হলে। এখানে দর্শক সমাগম ছিল লক্ষণীয়। প্রবাসী অভিভাবকদের উদাসীনতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের অপারগতা একটি তারুণ কে কতোটা বিপদগামী করে তুলতে পারে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন পরিচালক কাজী টিপু। ছবিটির একটি ট্রাইলার নিচে তুলে ধরা হলঃ
[youtube P6XQwYqTIpM nolink]
তবে সমালোচকরা মনে করেন, পরিচালক তার ছায়াবানীর প্রধান চরিত্র ইমরানে বখে যাওয়া এমন ভাবে তুলে ধরেছেন যেন তিনি তরুণদেরকে বখে যাওয়ার তামিল দিচ্ছেন। ইমরানের নেশা করা, ড্রাগ নেয়া, ডিসকোয় গিয়ে মাতাল হওয়ার দৃশ্য গুলোয় ছিল বেশ একটু বাড়াবাড়ি। পরিচালক জানান ছায়াবানীটি তিনি নির্মান করেছেন তার দেখা একটা বাস্তব ঘটনা নিয়ে। কিন্তু গল্পের কিছু কিছু জায়গা কেমন যেন খাপছাড়া মনে হয়েছে। সংলাপ এবং গল্পের ধারাবাহিকতায় কিছুটা দূর্বলতা আছে বলে মনে হয়েছে। ছবিতে নাদিয়া নামে একটি মেয়েকে দেখানো হয়েছে, একজন তরুণী বাঙ্গালী হিসাবে তার পোষাক এবং গভীর রাতে ডিসকোয় গিয়ে বেসামাল নাচের দৃশ্য অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। অনেক দর্শককে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে নাদিয়া নামের চরিত্রটির অবতারণ করে পরিচালক আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন? আর যা বোঝাতে চেয়েছেন তা কি আসলেই পেরেছেন? তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় ছিল, ছায়াবানীটির শেষ পর্যায়ে ইমরান ভীষনরকম অনুতপ্ত। সে তার ভুলগুলো বুঝতে পারে এবং অনুশুচনায় ভোগে। তবে ছায়াবানীটির মূল ম্যাসেজ প্রতিটি দর্শকের খুব গহীনে যে নাড়া দিয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। যার ব্যাতিক্রম নই আমি নিজেও। একজন ভাবুক, একজন চিন্তুক এবং একজন খোলাচোখের মানুষ হিসেবে দায়িত্বশীল কন্ঠে বলব ছায়াবানীটির মূল কথা ছিল বর্তমান সময়ের বাস্তব চিত্র। আমাদের অভিভাবকরা বিত্তের পেছনে ছুটতে গিয়ে চিত্ত হারিয়ে সন্তান সংসার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। যার ফলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আলোর পথ ছেড়ে অন্ধকারগামী হচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতি থেকে দুরে সরে গিয়ে ইউরোপীয় সভ্যতার নামে তারা যে পথে ধাবিত হয়েছে সে পথ মোটেও একজন বাঙ্গালী মুসলমানের পথ না।১৮+ এর প্রদর্শনী শেষে ভেনিসের রেডিও বেইজ এর উপস্থাপক পলাশ রহমানের উপস্থাপনায় শুরু হয় দর্শক মতামত গ্রহণ এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ সময় প্রবীণ প্রবাসী লুৎফর রহমান বলেন সময়ের প্রয়োজনে এরকম আরো ছবি নির্মিত হওয়া উচিৎ। এতে প্রবাসী অভিভাবকরা সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখবে। তিনি সমালোচনা করে বলেন, ছায়াবানীটিতে একটু অতিমাত্রায় নেগেটিভ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। খারাপের পাশাপাশি ভালো কিছু দেখালে ছবির পরিপূর্ণতা বৃদ্ধি পেতো।দর্শক মতামতে আরো যারা ছিলেন- ভেনিসের প্রধান ইমিগ্রেশন অফিসার ডক্টর জানফ্রাংকো বনেচ্ছো, ভেনিস পৌরসভার কর্মকত্তা মারতা আনসেলমি, ইতালো ত্রেনতিন এবং ভেনিস বাংলা স্কুলের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিজান। বাংলা স্কুলের সভাপতি সৈয়দ কামরুল সরোয়ার পরিচালক কাজী টিপুকে ধন্যবাদ জানান এবং ১৮+ ফিল্মের প্রধান অভিনেতা ইমরান (তানজিল সরদার) কে একটি সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।দ্বিতীয় স্তরে ছিল বিজয়ের আলোচনা। ভেনিস বাংলা স্কুলের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আকাশের উপস্থাপনায় বিজয় দিবসের আলোচনায় অংশ নেন হেদায়েত উল্লাহ, নান্নু সরদার, আকতার বেপারী, জায়েদুল আলম বাধন এবং কামরুল সারোয়ার।আলোচনা পর্বশেষে শুরু হয় কবিতা আবৃতি ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা আবৃতি করেন ভেনিস বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। দেশের গান পরিবেশন করেন প্রিয়া, পলক, আশিক, কৃষা ও সোহানুর রহমান সোহান। ভেনিস বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা প্রবীণ বাংলাদেশি লুৎফর রহমানকে একটি সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
পরিচালক কাজী টিপু জানান তিনি বাংলাদেশ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে যুক্ত হন নাটক নির্দেশনায়। সহকারী পরিচালক হিসেবে বেশ কিছু নাটক এবং বিজ্ঞাপনে কাজও করেন। আরো ভালো কিছু সৃষ্টি এবং উচ্চশিক্ষা আহরনের অধুনালুপ্ত জ্ঞান তাকে টানে। ২০০৭ সালে পাড়ি জমান চলচিত্রের স্বপ্নপুরী ইতালিতে। নানা প্রতিকুলতার সাথে পেরে না উঠে মাত্র দুই বছরের মাথায় দেশে ফিরে যান। ২০১১ সালে আবার ফিরে আসেন। ইতালির বিখ্যাত বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেমা বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। পাশাপাশি একটি টেলিফিল্ম নির্মানের কাজে হাত দেন। ২০১২ সালে নির্মাণ করেন তার প্রথম টেলিফিল্ম ‘লাভ লক প্যারিস’ ফ্রান্সে চিত্রায়িত টেলিছবিটির বেশ কটি প্রদর্শণী করা হয়েছে ইউরোপের বাংলাদেশি বহুল শহর গুলোতে। কাজী টিপু জানান তার আগামী টেলিফিল্মের নাম ‘চুমকির বিয়ে’ এ টেলিফিল্মটির শুটিং করা হবে প্রাকৃতির সৌন্দর্যের স্বর্গ সুইজারল্যান্ড এবং ভালোবাসার নগর ভেনিসে।
অনেকেই আছেন যারা ইতালি প্রবাসীদের তুচ্ছ করে কথা বলেন। তাদের ভাষায় এখানে সব বদলা কামলারা থাকে। এই বদলা কামলারাই প্রবাসে বসে দেশের কথা ভাবে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বিজয়ের উৎসব পালন করে। বাংলা স্কুল করে প্রবাসী শিশু কিশোরদের মাতৃভাষা শিক্ষা দেয়। নিজের ধর্ম এবং সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়। দেশকে দেশের পতাকাকে বিশ্ব দরবাতে তুলে ধরে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায়। সর্ব সময় দেশের মঙ্গল কামনা করে।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পারবেন। ]]