গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য গাড়ি চালনার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। পেশাদারি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২০ বছর এবং অপেশাদারি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নূন্যতম ১৮ বছরের যেকোনো ব্যক্তি আবেদনপত্র দাখিল করতে পারবেন। তবে লাইসেন্স দেওয়ার আগে বিআরটিএ তিন স্তরের পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে কি করতে হবে
প্রথমে বিআরটিএ’র ওয়েবসাইট বা বিআরটিএ অফিস থেকে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। ফর্মটি বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে। এটি পূরণ করে নির্দিষ্ট ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
শিক্ষানবিস লাইসেন্স করার জন্য একটি গাড়ির ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ ৩৪৫ টাকা। দু’টির (গাড়ি ও মোটরসাইকেল) ভ্যাটসহ ৫১৮ টাকা। তবে লাইসেন্স প্রথমটি না করে দ্বিতীয়টি করাই ভাল। এতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল উভয় যান চালানোর অনুমোতি পাওয়া যাবে।
শিক্ষানবিশের মেয়াদ থাকে ৩ মাস। এটি আবার নবায়ন করা যায়। তার জন্য ফি দিতে হবে ৮৭ টাকা।
শিক্ষানবিস থেকে পূর্ণমেয়াদের লাইসেন্সের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অপেশাদার এবং অন্যটি পেশাদার। অপেশাদার লাইসেন্স ফি ২ হাজার ৩০০ টাকা। আর পেশাদার লাইসেন্স ফি ১ হাজার ৪৩৮ টাকা।
রয়েছে কিছু প্রক্রিয়া
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু প্রক্রিয়া পার হতে হবে। প্রথমত, বিআরটিএ থেকে নির্দিষ্ট করা কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। তবে আবেদনকারীকে তার ঠিকানা অনুযায়ী বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভুক্ত সেখানে আবেদন করতে হবে। এরপর আবেদনকারীকে সার্কেল অফিস থেকে একটি লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবে। আবেদনকারী এ লাইসেন্স দিয়ে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে।
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সে উল্লেখিত দিনে অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেটের অধীনে তার পরীক্ষা নেওয়া হয়।
এ সময় লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক সংকেত সম্পর্কিত নানা বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। মাঠ পর্যায় বা ফিল্ড টেস্টে পরীক্ষার্থীকে গাড়ী চালাতে দেওয়া হবে। তখন তাকে পরীক্ষকের নির্দেশ মত সামনে থেকে পেছনে, ডানে থেকে বাঁয়ে গাড়ি চালাতে হতে পারে। এভাবে তিনটি ধাপ অতিক্রম করেই পাওয়া যাবে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স।
একটি শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের ফরমে থাকে- নিজের নাম,বাবার নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ , ব্লাড গ্রুপ, সংস্থার নাম এবং ঠিকানা।
লাইসেন্স নাম্বার ও তারিখ কর্তৃপক্ষ পূরণ করবে এবং লাইসেন্স ফরমের সাথে ফি জমা দেওয়ার কাগজ, বয়স প্রমাণের কাগজ এবং ঠিকানা প্রমাণের কাগজ যুক্ত করতে হবে। সাথে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি, নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ, সদ্য তোলা ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি দিতে হবে। এর সাথে একটি মেডিকেল রিপোর্টও যুক্ত করতে হবে। যেখানে স্বাস্থ্য ও স্বভাব সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন থাকবে। উভয় ফরমেই আবেদনকারীর ছবি ও স্বাক্ষর দিতে হবে।
তিনটি পরীক্ষায় পাশ করার পর নির্ধারিত ফর্মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি দিয়ে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।
নির্ধারিত দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) দেওয়ার জন্য উপস্থিত হতে হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে বিআরটিএ স্মার্টকার্ড ইস্যু করে। স্মার্টকার্ড পাওয়ার তারিখ এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করতে হলে আরও কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে মোটরযানের ওজনের ওপর ভিত্তি করে বয়সের সীমা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোটরযানের ওজন ২৫০০ কেজি’র নিচে হলে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। আর মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি হলে বয়স কমপক্ষে ২৩ বছর হতে হবে এবং মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি হলে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে।
তবে পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে প্রথমে হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। তারপর কমপক্ষে তিন বছর পর পেশাদার মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তিনি আবেদন করতে পারবেন। এরপর মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে তিন বছর পর ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।
পেশাদারের লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর অন্যদিকে পেশাদারের ৫ বছর। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে তা নবায়ন করতে হয়। এজন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ধারিত ফরমে আবেদন, রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সাটিফিকেট, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি, নির্ধারিত ফি জমাদানের রশিদ, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন এবং সদ্যতোলা ১ কপি পাসপোর্ট ও ১ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি লাগবে।
স্মার্টকার্ড পাওয়ার জন্য অপেশাদার লাইসেন্সের আবেদনকারীদের প্রথমে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ’র নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে জমা দিতে হবে। তারপর আবেদনপত্র ও সংযুক্ত কাগজপত্র নিয়মতান্ত্রিক হলে ওই দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) গ্রহণ করা হবে। তারপর স্মার্টকার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন করে আবেদনকারীকে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে পুনরায় ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। সফলভাবে পরীক্ষা দেওয়ার পর আবেদনকারীকে বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট সার্কেল অফিসে উপস্থিত হতে হবে।