পলাশ রহমান ভেনিস ইতালিঃ
ইউরো জোনের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইতালির রাজনীতিকরা ঐতিহাসিক এক নজির স্থাপন করেছেন। তারা প্রেসিডেন্ট জর্জ নাপোলিতানোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ডান এবং বামের সমন্বয়ে শক্তিশালী জোট সরকার গঠন করেছেন। তাদের এই অকল্পনীয় নজির স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রায় দুমাসের বেশি সময় ধরে চলা রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান হয়েছে। ইউরোপ জুড়ে নেমে এসেছে স্বস্তির শীতল হাওয়া।
নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারঃ ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি দ্বিতীয় মেয়াদে নানাভাবে তার সরকার পরিচালনায় ব্যর্থ হন। ব্যর্থতার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। তার সরকার পতনের প্রধান ইস্যু ছিল অর্থনৈতিক মন্দা। গলা সমান ঋণের দায় রেখে ২০১১ সালের শেষের দিকে তিনি পদত্যাগ করেন। সে সময় ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে কোনো দলই নতুন নির্বাচনের দাবি করেনি। তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রপতি জর্জ নাপোলিতানোকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ জানায়। রাষ্ট্রপতি সঙ্কট মোকাবেলায় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের উদ্যোগ নেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মারিও মনতিকে আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মিস্টার মনতি তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। রাষ্ট্রের আয় ব্যয়ে সমতা আনতে বাড়িয়ে দেন ট্যাক্সের মাত্রা। অভিবাসীদের ডকুমেন্ট নবায়নের ক্ষেত্রেও খরচ বৃদ্ধি করা হয়। অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদানের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করা হয়। একের পর এক অর্থনৈতিক আইন পরিবর্তন করা হয়। টু’শব্দটি করেন না রাজনীতিকরা। তারা মনোযোগী হন নিজেদের ঘর গোছাতে। এভাবে কেটে যায় দেড় বছর। ঋণের বোঝা আনুপাতিকহারে কমে আসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান মারিও মনতি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন নির্বাচন আহ্বান করতে। প্রেসিডেন্ট জর্জ নাপোলিতানো সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। ঘোষিত তারিখ মোতাবেক গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির দুই কক্ষ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে ৬৩০ আসনে এবং উচ্চ কক্ষে ৩১৫ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৪ কোটি ৭০ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
সরকার ও সঙ্কটঃ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, কামেরা দি দেপুতাতিতে (পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ বা ডেপুটি চেম্বার) ২৯.৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে পিয়ের লুইজি বেরসানির নেতৃত্বাধীন মধ্যম বাম জোট পারতিতো দেমোক্রেতিকো বা ডেমোক্রেটিক পার্টি। অপরদিকে ২৯.১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির মধ্যম ডান জোট পোপোলো দেল্লা লিবেরতা বা পিপল অব ফ্রিডম। কিন্তু পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সেনাতো দেল্লা রেপুবলিকায় সরকার গঠন করার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো জোটই অর্জন করতে পারে না। সরকার গঠন করতে হলে সেনাতোর ৩১৫ আসনের মধ্যে পেতে হবে কমপক্ষে ১৫৮ আসন। কিন্তু বেরলুসকোনির ডান জোট সেখানে পায় ১১৭ আসন, বেরসানির বাম জোট ১২১ আসন এবং বাকি আসনগুলোয় নির্বাচিত হয় অন্যান্য ছোট দল এবং জোট। এর মধ্যে সংস্কারপন্থি দল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া একজন বিখ্যাত কমেডিয়ান বেপ্পে গ্রিল্লোর নেতৃত্বাধীন দল মুভিমেন্ত চিংকুয়ে স্তেল্লে বা ফাইভ স্টার মুভমেন্ট এককভাবে ২৫.০৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে আসে। এবং সরকার গঠনের জন্য দলটির সমর্থন হয়ে ওঠে অপরিহার্য। কিন্তু মুভিমেন্ত চিংকুয়ে স্তেল্লে সাফ জানিয়ে দেয় তারা সংস্কারের রাজনীতি করে। তারা মনে করে ইতালির অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য দুর্নীতিবাজ এবং বৃদ্ধ রাজনীতিকরা দায়ী। এসব বৃদ্ধকে বুঝতে হবে তাদের অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের সময় এসেছে। মাত্র ৩ বছর বয়সী এ দলটি ইতালীয় যুবকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। রাজনীতিতে তাদের সংস্কারনীতি ও ইউরোপের তথাকথিত ব্যয় সংকোচন নীতির বিরোধিতা করায় দলটি যুবকদের কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যে কারণে অনেকেই দলটিকে একটি রাজনৈতিক দল না বলে রাজনৈতিক আন্দোলন বলতেই বেশি পছন্দ করেন।
দেখার বিষয় হচ্ছে ইতালিতেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এ বছর অনেক নব্য ইতালিয়ান (যে সব অভিবাসী ইতালির নাগরিকত্ব পেয়েছেন) তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বাংলাদেশের মতো কোনো হাঙ্গামা হয়নি। রাজনৈতিক লু হাওয়ায় পোড়েনি দেশের মানুষ কিংবা সম্পদ। নির্বাচনে যে যার মতো করে ভোটার আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। নিজ দলের মার্কায় সিল বাড়াতে অন্য দলের সমালোচনা করেছেন। তুলোধোনা করেছেন প্রতিপক্ষের ইশতেহার। কিন্তু সেখানে কোনো অশ্লীলতা বা ব্যক্তিগত আক্রমণ ছিল না। বরং এবারের নির্বাচনী স্টেজে সব নেতাকেই সতর্ক হয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিষয়ে কেউই আগ বাড়িয়ে কিছু বলেননি। মধ্যম বাম দল পারতিতো দেমোক্রেতিকোর প্রধান নেতা পিয়ের লুইজি বেরসানি তার এক নির্বাচনী সভায় আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, অর্থনৈতিক বিষয়ে অলৌকিক কিছু করা যাবে না। তবে পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই অর্থনীতির চাকা ঘুরবে এবং তারা জোট সরকার গঠন করলে তাই করা হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ধনকুবের সিলভিও বেরলুসকোনি আগেভাগে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার জোট সরকার গঠন করলেও তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হবেন না।
সরকার গঠন ও সঙ্কট নিরসনঃ ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে এপ্রিলের শেষ। নির্বাচন পরবর্তী প্রায় দুমাস সময় পার হয়ে যায়। সরকার গঠনে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় কোনো আশার আলো দেখা যায় না। রাজনীতিকরা ঐকমত্যে আসতে পারেন না। ইউরোপজুড়ে হতাশা আর উদ্বেগ দেখা দেয়। পুঁজিবাজারে দরপতন হয়। ইউরোর দাম পড়ে যায়। ইউরো জোনের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও এর সংস্কার উদ্যোগ প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ইতালির আয় ও ব্যয়ের সমতা এবং ইউরোপের কৃচ্ছ্রনীতি বা ব্যয় সংকোচন পরিকল্পনা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর মধ্যে সাত বছর মেয়াদি ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জ নাপোলিতানোর মেয়াদ শেষ হয়ে রাষ্ট্র অভিভাবকহীন হয়ে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিচক্ষণ রাজনীতিকরা নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে না গিয়ে নাপোলিতানোকেই আগামী ৭ বছরের জন্য পুনর্নির্বাচিত করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ৮৭ বছর বয়সী জর্জ নাপোলিতানো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন এবং নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু করেন। সরকার গঠন নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। পুনরায় নির্বাচন করে দেশকে অর্থনৈতিক সঙ্কটে না ফেলে তিনি ডান এবং বামের উদ্যোগে একটি শক্তিশালী সরকার গঠনের আহ্বান জানান। তার আহ্বানে প্রধান দুই জোট সম্মতি প্রকাশ করে। তিনি মধ্যম বাম জোট পারতিতো দেমোক্রেতিকোর ইয়াং নেতা ৪৬ বছর বয়সের এনরিকো লেত্তার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগের প্রতি প্রধান দুই জোট এবং অপর এক জোট লিসতা চিভিকার সম্মতি থাকলেও বেপ্পে গ্রিল্লোর চিংকুয়ে স্তেল্লেসহ অনেকেই সমর্থন দেয়নি। তাদের মতে প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগ দুর্নীতিবাজ ও নারী কেলেঙ্কারির বরপুত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেরলুসকোনিকে বিচারের হাত থেকে রক্ষা করবে। কারণ নয়া প্রধানমন্ত্রী এনরিকোর চাচা জাননি লেত্তা বেরলুসকোনির অন্যতম প্রধান সহযোগী। এছাড়া বেরলুসকোনির অপর এক সহযোগী আনজেলিনো আফানোকে নতুন সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ইতালিতে এখন নব্য ইতালিয়ান এর (যে সব অভিবাসী ইতালির নাগরিকত্ব পেয়েছেন) সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে অভিবাসীদের বসবাস বেশি- যেমন রোম, মিলানো, পালেরমো, ভেনিস ইত্যাদি প্রভিন্সের নির্বাচনী আসনগুলোর জন্য নব্য ভোটাররা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং নব্য ইতালীয়দের ভোট নিয়ে নির্বাচনের আগে তুমুল হিসাব-নিকাশ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। দলীয় নেতারা নানা রকমের মুখরোচক কথা বলে নব্য ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। এদিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থেকেছে পারতিতো দেমোক্রেতিকো। এ দলটি আগে থেকেই তাদের শহরভিত্তিক প্রতিনিধি হিসেবে অভিবাসীদের দলে টেনে নিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় ফোরামে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়ে রেখেছে। স্বাভাবিকভাবেই অভিবাসীরা ইতালিতে তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে পারতিতো দেমোক্রেতিকোকে ভাবতে শুরু করেছে। অপরদিকে নব্য ভোটারদের ভোট প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে থেকেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেরলুসকোনির দল পারতিতো দেল্লা রিপাবলিকা। এ দলের অন্যতম প্রধান কোয়ালিশন দল লেগানর্দ চরমভাবে অভিবাসীবিরোধী হিসেবে পরিচিত। ইতালিতে বসি-ফিনি নামে একটি আইন আছে যা অভিবাসীদের স্বার্থ ক্ষুণœ করেছে। অধিকাংশ অভিবাসী মনে করেন এ আইনটির জন্য বেরলুসকোনির দল সরাসরি দায়ী।
প্রধানমন্ত্রী লেত্তা ও মন্ত্রিপরিষদঃ ১৯৮৭ সালের ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জোভান্নি গ্লোরিয়োর পরে ৪৬ বছর বয়সের এনরিকো লেত্তা ইতালির এবং বর্তমান ইউরোপের সব চেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী। বয়স কম হলেও লেত্তার অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে অনেক বড় করে দেখা হচ্ছে। তিনি তেল আর জল মেশানের মতো করে ডান এবং বামের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশই নতুন মুখ এবং নারী। ইতালির ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো দুই জন নব্য ইতালিয়ানকে মন্ত্রী করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন হলেন ইনতে গ্রাসিঅন বা বিদেশি বিষয়কমন্ত্রী চেচিলে কায়েনজে। তিনি কংগো বংশোদ্ভূত একজন কৃষ্ণ বর্ণের নব্য ইতালিয়ান। ১৯ বছর বয়স থেকে ইতালিতে বসবাস করেন। পড়াশুনা করেছেন চিকিৎসাবিদ্যায়। ২০০৪ সাল থেকে তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপরজন হলেন জোসেফা ইদেম। তিনি সমবায় এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ দুজন মন্ত্রীকে কেন্দ্র করে অভিবাসীদের মধ্যে আশা-উদ্দীপনার মাত্রা অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। তারা মনে করছেন, ইতালিতে অভিবাসীদের স্বার্থ আগের চেয়ে বেশি রক্ষা হবে। প্রধানমন্ত্রী লেত্তা ইতালির রাজনৈতিক সঙ্কটকে একটি সামাজিক জরুরি অবস্থা উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার ইতালির সাধারণ মানুষের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করবে এবং ইউরোপের কৃচ্ছ্রসাধন থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে। তিনি অর্থনৈতিক সঙ্কট দূর করা, বেকারত্ব সমাধান করা ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেবেন। ব্যয় সংকোচন নীতির বিপরীতে উৎপাদন ও বিনিয়োগের প্রতি বেশি মনোযোগী হবেন।
ইতালির জাতীয় নির্বাচনে এবারের প্রধান ইস্যু ছিল অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং বেকারত্ব। ভোটাররা খুব সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করার চেষ্টা করেছেন, কোন দল অর্থনৈতিকভাবে ইতালিকে চাঙ্গা করতে পারবে। কারা কত পরিমাণে ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাদের নির্বাচনী ইশতেহার কতটা ব্যবসায়ী বান্ধব ছিল। বেকারত্ব কমাতে পারবে কারা? বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু করতে পারবে কারা? ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে পারবে কারা? এসব প্রতিশ্রুতির দিক থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেরলুসকোনির দল এগিয়ে থাকলেও তার ব্যক্তিগত অনেক বিষয় ভোটারদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো বেরলুসকোনির নারী কেলেঙ্কারি। অনেক ভোটার মনে করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নারী কেলেঙ্কারির জন্য বিশ্ব মহলে ইতালির ইমেজ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে পারতিতো দেমোক্রেতিকোর পক্ষে নব্য ভোটারদের ভোট এবং আধুনিক বাম ঘরানার প্রায় সকল ভোটারের সমর্থন থাকলেও তাদের দলের প্রথম সারির একজন মহিলা নেত্রী সমকামী। তিনি নির্বাচনের আগে স্পেনে গিয়ে একজন মহিলাকে বিয়ে করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছিলেন তার দল সরকার গঠন করলে ইতালিতেও সমকামীদের বিয়ের অনুমতি দেয়া হবে। তার ঐ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে ক্যাথলিক গির্জা। ইতালীয় রাজনীতিতে ক্যাথলিক গির্জার প্রভাব লক্ষণীয়। প্রায় সকল রাজনৈতিক দলেই ক্যাথলিক গির্জার প্রভাব রয়েছে। রাজনীতিকরা পর্দার আড়ালে গির্জাওলাদের তোয়াজ করে চলেন। তাছাড়া ইতালিতে বয়স্কদের প্রায় ৮০ ভাগই রক্ষণশীল ক্যাথলিক। পিডি নেত্রীর বক্তব্যে তারাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অপরদিকে বেপ্পে গ্রিল্লো রাজনীতিতে সংস্কার ও বৃদ্ধ বিদায়ের কথা বলে যুবকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ভোটারদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি এবং কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতাই এমন একটি জটিল ফলাফলের জন্য দায়ী।
প্রত্যাশা ও আশঙ্কাঃ ইতালির রাজনৈতিক ইতিহাস কখনোই খুব বেশি সুখকর নয়। অতীতের সব সরকারই পার্লামেন্টে আস্থা সঙ্কটে থেকেছে। একমাত্র বেরলুসকোনির প্রথম মেয়াদের সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার পূর্ণ মেয়াদ সরকার চালাতে পারেনি। প্রতিবারই দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়েছে। ২০১১ সালের শেষে দ্বিতীয় মেয়াদের বেরলুসকোনি সরকারের পতন হলে অর্থনৈতিক সঙ্কট বিবেচনায় এনে মধ্যবর্তী নির্বাচনে না গিয়ে গঠন করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তখন ইতালির অর্থনৈতিক সঙ্কট ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরোকে প্রায় পতনের মুখে নিয়ে গিয়েছিল। অর্থনীতিবিদ মনতির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনে সৃষ্ট জটিলতা কাটিয়ে ইয়াং নেতা লেত্তা ইতালির হাল ধরেছেন। তার হাল ধরার সময়টাকে কোনোভাবেই ভালো সময় বলা যাবে না। তিনি যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন তখন ইতালি পার করছে বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময়। অর্থনৈতিক মন্দা আর সরকারি ঋণের বোঝায় রাষ্ট্রীয় মেরুদণ্ড ধনুকের মতো বেঁকে রয়েছে। মানুষের আয়ে এবং ব্যয়ে চলছে চরম সমন্বয়হীনতা। সরকারি হিসাবে ১১.৬ শতাংশ মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ বহন করছে। সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ রয়েছে। ডানপন্থি বেরলুসকোনির জোটের সঙ্গে সরকারের ভাগাভাগি নিয়ে বাম জোটেও অসন্তোষ রয়েছে জোরেশোরে। অপরদিকে দুজন নব্য ইতালিয়ানকে মন্ত্রী করার কারণেও তাতে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে কৃষ্ণ বর্ণের মন্ত্রী মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। পত্রপত্রিকা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বিতর্ক দেখে মনে হচ্ছে ইতালি এখনো বিদেশি বংশোদ্ভূত কাউকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এসব কারণে পার্লামেন্টে তার সরকার আস্থা সঙ্কটে পড়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবু প্রত্যাশা সকল সঙ্কট মোকাবেলা করে মানুষের চাওয়া পাওয়ায় সমতা আনতে পারবেন এই ইয়াং নেতা।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে জানতে “এখানে ক্লিক করুণ” তুলে ধরুন নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। ]]
eisob lekhok er kothy to ar!!! ek ta desh poriborton hote pare naaaa~~~~~ tau jara italty te bortoman bosobas kortesen tader ar ektu dhorjo dhorte hobeeeee…….ei asar bani ti lekhok dite parle kitartho hotam.