মাঈনুল ইসলাম নাসিম : গ্রীক পুরাণে অপশক্তি ‘ডেমন’-এর বর্ণনায় বলা হয়েছে, ঈশ্বরের অবাধ্য হবার কারণে ‘ডেমন’কে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয়। সেই গ্রীক সভ্যতার পাদপিঠ এথেন্সে আজকের বাংলাদেশি ‘ডেমন’ তথা দালাল-সিন্ডিকেট এতোটাই অভিশপ্ত হয়ে ওঠে যে, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী স্বদেশী ভাইদের পাসপোর্ট নিয়ে নেক্কারজনক বানিজ্য করতে তাদের বিবেকে বাঁধেনি।
গ্রীক পুরাণে পবিত্রতার পরিবর্তে পঙ্কিলতায় ভরপুর ‘ডেমন’রা সংখ্যায় সীমাহীন হলেও এথেন্সের বাংলাদেশি দালাররা অবশ্য বরাবরই ছিল সংখ্যায় সীমিত। তবে গ্রীক পুরাণের বর্ণনা মোতাবেক ‘ডেমন’রা নিজেদেরকে শক্তিশালী করার জন্য যেভাবে হাত মিলিয়েছিল বড় বড় অপশক্তির সাথে, ঠিক একই স্টাইলে এথেন্সের স্বীকৃত দালাল মিজান-কামরুল গং দূতাবাসে বিএম জামাল ও রাজিবের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে পাসপোর্ট পিসি কেনাবেচার ধুম লাগিয়ে খোদ দূতাবাসকেই পরিণত করেছিল লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কাউন্সিলর বিএম জামাল হোসেনের নেতৃত্বে এবং কনস্যুলার এসিস্টেন্ট রাজিব আহমেদের যোগসাজশে স্থানীয় দুই দালাল মিজানুর রহমান ও শেখ কামরুল ইসলাম গড়ে তোলে লক্ষ লক্ষ ইউরোর অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট। ২০১৩ সালের শুরুতে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ এথেন্সে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ‘টু’ শব্দটি করার দুঃসাহস দেখায়নি কেউই। এমনকি ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রীস’-এর নেতৃবৃন্দেরও রহস্যজনক নির্লিপ্ততা নিদারুনভাবে পলিক্ষিত হয় তখন।
রাজধানী এথেন্সের বাংলা টাউন খ্যাত ‘ওমোনিয়া’ এলাকায় বসেই দূতাবাসের সিল-সিগ্নেচার দেয়া হতো যখন তখন যে কাউকে ক্যাশ পেমেন্টের ভিত্তিতে। দূতাবাসের অভ্যন্তরেও রাতভর চলতো পাসপোর্ট পিসির ম্যাকানিজম। বিএম জামাল-রাজিব-মিজান-কামরুল কালো টাকার নেশায় এতোটাই বুঁদ হয়েছিল যে, তাদের পিসি’র তালিকায় বাদ পড়েনি গ্রীসে মারা যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্টও।
হতভাগা তাদেরই একজন মাদারীপুর জেলার টিটু বেপারী, যিনি এথেন্সে মৃত্যুবরণ করলে ঐ দালাল-সিন্ডিকেট সুকৌশলে তার পাসপোর্টটি পিসি করে আলীম খালাসী নামের আরেক বাংলাদেশির কাছে তা বিক্রি করে নির্ধারিত মূল্যে নতুন ছবি বসিয়ে। এ রকম বহু অপকর্মের রাজস্বাক্ষী এথেন্সের সুপরিচিত কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব জলিল হাওলাদার, যিনি একসময় কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গ্রীস ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট জলিল হাওলাদার একাধারে এথেন্সের মাদারীপুর জেলা প্রবাসী কল্যান সমিতিরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ গত বছর দায়িত্ব নেয়ার পর অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেলে ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় দালাল সিন্ডিকেট। পরিণতিতে ষড়যন্তের জাল বিস্তৃত হয় রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে। মুখচেনা দালালদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিগত মাসগুলোতে এথেন্সে ঘটে যায় কতনা তুলকালাম।
ভিডিও দেখুন :
[youtube 1i5kE-0HeRY?modestbranding=1&rel=0 nolink]