মোটা মানুষ মানেই ধণী মানুষ, সুখী মানুষ, একটা সময় অনেকে তাই বিশ্বাস করতেন। আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে- আমাদের জানার পরিধি বেড়েছে। চিন্তায় পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা আর কোনো ভ্রান্ত ধারনায় বিশ্বাস করতে চাই না। বিজ্ঞান অনেক কিছু খোলাসা করে দিয়েছে আমাদের সামনে। অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া অসুস্থতার লক্ষণ। এখন পর্যন্ত বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ বিজ্ঞানীদের ধারনা তাই।
এবার আমরা জেনে নেই ফ্যাট আসলে কি? কিভাবে আমাদের শরীরে ফ্যাট এর উৎপত্তি ঘটে?
মানবদেহ ৩টি টিস্যু দিয়ে গঠিত। সবচেয়ে নিচে যে স্তরটি তার নাম হচ্ছে ‘হিপোডেরমিস’ যার মধ্যে রয়েছে আডিপোসিটি সেল। আডিপোসিটি সেল সাধারনত ৫০% ফ্যাট জমা রাখে। হিপোডেরমিস মানব শরীরের একদম অভ্যন্তরীণ অংশে অবস্থিত যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা। হিপোডেরমিসের সাথে রয়েছে এলাসটিন এবং ফাইবার।
এবার আমরা জেনে নেই আডিপোসিটি সেলটি কিভাবে গঠিত?
ছোটছোট গ্যাস বেলুনের মতো এগুলো জমা থাকে। বিভিন্ন কারনে এগুলো বড় হতে থাকে এবং শরীরে ফ্যাটের মাত্রা বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে আমরাও মোটা হতে থাকি। বোঝার সুবিদার্থে আডিপোসিটি সেল এর একটি ইমেজ দেয়া হল।
এবার আমরা জেনে নেই কি কারনে মোটা হয়ে যাই?
বংশগত কারনে আমরা মোটা হতে পারি, হরমোনাল কারনে হতে পারি। অতিরিক্ত চিন্তা, সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহন না করা, অতিরিক্ত ঔষধ সেবন, অতিরিক্ত ধুমপান, এলকোহোল গ্রহণ, গর্ভকালীন সময়ে, মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক এবং ব্যায়াম না করাসহ ইত্যাদি কারনে আমরা মুটিয়ে যেতে পারি।
শরীরের ওজন কমাতে অনেকে ডায়েট কন্ট্রোল করেন। কিন্তু নিয়ম মাফিক না করাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিয়মিত করতে পারেন না। কেউ কেউ দেখা গেছে খাচ্ছেনা মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে। কারো অভিযোগ খাচ্ছিনা তবু কি করে এত মোটা হই? কারো ঈর্ষা- আমার বান্ধবী এত খায় তবু ওকেন মোটা হয়না ইত্যাদী।
আসুন এবার আমরা জেনে নেই এর কারন কি? প্রথমত না জেনে পরিমিত খাবার গ্রহন না করার কারনে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। না খেয়ে থাকলেই যে কেউ মোটা হবেনা তা ঠিকনা। কারন আমাদের শরীরের সেলগুলো খুবই বুদ্ধিমান, না খেয়ে থাকলে তারা ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আডিপোসিটির মাধ্যমে। কারন আডিপোসিটি সেল ফ্যাট ধারন করে। আর যারা খেয়েও মোটা হননা এটা বংশগত কারনে হয়ে থাকে। মানুষ যখন অতিরিক্ত টেনশনে থাকে তখন স্বাভাবিক কারনেই একটু বেশী পরিমানে খায়। এ কারনেও মানুষের ওজন বৃদ্ধি পায়।
এবার আমরা জেনে নেই কি করে আমরা সুস্থ থাকতে পারি?
- নিয়মিত ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে, যা আমাদের শরীরে টক্সিনরোধে সাহায্য করবে। টক্সিন হচ্ছে এক ধরনের বিষ যা বিভিন্ন কারনে আমাদের শরীরে তৈরী হয়ে থাকে। যেমন ফরমালিন বা অন্যান্য রাশায়নিক যুক্ত খাবার গ্রহণ, ধুমপান, পেট্রোল জাতীয় কেমিক্যাল যুক্ত প্রসাধনী ব্যাবহারসহ বিভিন্ন ভাবে শরীরে টক্সিন জন্ম নেয়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে সঠিক উপায়ে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ব্যায়ামাগারে যান নিয়মিত। না পারলে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ মিনিট হাটুন সকাল বিকাল। ঘরের ভেতর হালকা ব্যাম করার অভ্যস গড়ে তুলুন।
- নিয়মিত ঘুমান অন্তত ৬ ঘন্টা। যদি আপনার বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হয়। ৪০ এর উর্ধে হলে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে।
পুষ্টিগুনের দিকে খেয়াল রেখে প্রতিদিনের খাবারের একটা তালিকা তৈরী করুন। তালিকায় অব্যশই সবজি জাতীয় খাবারের প্রাধান্য দিন। মিষ্টি খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। চা কিংবা কফিতে চিনি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। অতিরিক্ত চিনি আমাদের ইনসুলিনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। যা আমাদেরকে শুধু মোটাই করেনা ডায়োবেটিস হতেও সাহায্য করে। কার্বোহাইড্রেট খাবার প্রত্যেক দিন খাবেন না। যেমন ভাত, রুটি, নুডুলস, আলু, ইত্যাদি। প্রোটিন যুক্ত খাবার খান। যেমন সীজনাল শাক সবজি, ফলমূল। মাছ খান বেশী করে। তৈলাক্ত খাবার খাবেন না। এতে কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়ে। বাইরে খাওয়ার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন। রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যাবহার করুন। অতিরিক্ত তেল রান্নায় ব্যাবহার করবেন না। খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে পরবেন না। একটু হাটাহাটি করুন। প্রতিদিন সকালে গরম পানির সাথে লেবুর রস আর মধু মিশিয়ে পান করুন। আপনার পেটের অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করবে। যাদের গ্যাসটিকের সমস্যা আছে তারা কিছু খেয়ে তারপর পান করুন। ঠান্ডা পানিতে মধু মিশিয়ে খাবেননা তাতে আপনার ফ্যাট বাড়বে। অতিরিক্ত মেদ মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং করে তোলে অসুস্থ। একটু সচেতন হলেই আমরা ভালো থাকতে পারি।
তাহমিনা ইয়াসমিন শশী, ছাত্রী ভেনিস বিশ্ববিদ্যায়ল।