স্বভাবজাত কারণেই মানুষ অনুকরণ প্রিয়। তবে প্রতিটি মানুষের উচিত আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলার জন্য অন্যকে অনুকরণ নয়, বরং কাউকে আদর্শ মানলে তাকে অনুসরণ করা যেতে পারে। যে অবস্থার মধ্যে খাপ খাওয়ানো যায় না তার মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা না করে বরং নিজের মতো করে চলা উচিত।
এতে প্রতিটি মানুষ নিজেকে ফিরে পায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। নিজের ব্যক্তিত্ব পর্যালোচনা করলে কী ছিল আর কী হতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পোশাকের ক্ষেত্রেও নিজের সঙ্গে মানায় এমন রঙ আর কায়দা-কানুন ঠিক করে পোশাক পরতে হবে, অন্যকে অনুকরণ করে নয় ।
বিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগি বলেছেন, “যাই ঘটুক না কেন, নিজের মতো হও”। অ্যাঞ্জেলে পাদ্রি বলেছিলেন, “যারা অন্যের মতো হওয়ার চেষ্টা করে তাদের মতো হতভাগ্য আর নেই”।
বিখ্যাত উইলিয়াম জেমস্ একবার কিছু লোকের কথা বলেছিলেন, যারা নিজেদের চিনতে পারে না। তার মতে, “সাধারণ মানুষের মধ্যে মাত্র শতকরা দশ ভাগই নিজেদের মানসিক শক্তির উজ্জীবন ঘটাতে পারে”।
আমাদের যা হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমরা অর্ধ জাগরিত। আমরা আমাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার সামান্য অংশই কেবল কাজে লাগাতে পারি। ভালো করে বলতে গেলে, একজন মানুষ নিজের খোলসের মধ্যেই থেকে যায়। তার বহু ধরনের নিজস্ব সুন্দর আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে তার অনেকটাই কাজে লাগাতে পারে না।
আধুনিক জীববিজ্ঞান থেকে জানা যায়, একজন মানুষ তার বাবা-মায়ের প্রত্যেকের থেকে চবি্বশটি করে ক্রোমোজম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই আটচলি্লশটি ক্রোমোজমই জানিয়ে দিচ্ছে আপনি যা,- তাই !
পৃথিবীতে প্রতিটি ব্যক্তিই এক একটা আলাদা সত্তা। প্রত্যেকেরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেকেই এ দুনিয়াতে একটা নতুন কিছু। এটা ভেবেই খুশি হয়ে উঠুন আর প্রকৃতি আপনাকে যা দিয়েছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে তাকেই কাজে লাগান। খারাপ হোক আর ভালোই হোক, নিজে যে রকম সে রকমই প্রকাশ করুন। এতে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।
এমারসন তার আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধে লিখেছেন, “প্রত্যেক মানুষের শিক্ষাজীবনে একটা সময় আসে, যখন তার বোধ জাগে”। আর তাকে ভালো বা মন্দ হোক এসব শিক্ষা গ্রহণ করতেই হবে।
মনে রাখবেন,- ঈর্ষা হলো অজ্ঞতা, আর নকল করা হলো আত্মহত্যা।
পৃথিবী যদিও উদারতায় ভরা, তবু সুন্দর ভাবে গড়ে ওঠার জন্য যে শস্যের প্রয়োজন সেই শস্যের জন্য পরিশ্রম করা চাই, চাই চাষ করা, এবং যে শিক্ষার প্রয়োজন সেই শিক্ষাই সঠিকভবে গ্রহন করা প্রয়োজন।
কবি ডগলাস ম্যালচ বলেছিলেন তার কবিতার মাধ্যমে,—-
“তুমি যদি পাহাড়ের বুকে দেবদারু না হতে পারো,
তবে হয়ে ওঠো উপত্যকায় কোনো ঝোপ।
তুমি ঝোপও যদি না হতে পারো, তবে হয়ে ওঠো এক মুঠো ঘাস।
যদি দলপতি না হতে পারো, তবে হয়ে ওঠো কিছু সেনা।
যদি রাজপথ না হতে পারো, হতে চেয়ো কোনো সরু পথ”।
আমি বলি প্রতিটি মানুষের হওয়া উচিত একেবারে নিজস্ব পরিচয়ে, নিজের মতো করে। মূল কথাটি হলো, আমাদের সবারই নিজের মতো কিছু করার রয়েছে, সেটাকেই কাজে লাগাতে হবে। কাউকে ভালোভাবে না জেনে না বুঝে খারাপ কথা বা কোন রকম খারাপ মন্তব্ব না করাই ভালো। অন্যকে শ্রদ্ধা করলে নিজে সম্মানিত হওয়া যায় এবং বড় হওয়া যায়। তাই কাউকে অনুকরন না করে, খারাপ কিছু না ভেবে, খারাপ কিছু না করে, খারাপ কাছু না বলে, আমাদের নিজেদের নিজস্বটাকেই ফুটিয়ে তোলা উচিত।