প্যারিস বাঙ্গালিঃ ইয়াবা (থাই: ยาบ้า; অর্থ পাগলা ঔষধ) একধরনের নেশাজাতীয় ট্যাবলেট। এটি মূলত মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন এর মিশ্রন। কখনো কখনো এর সাথে হেরোইন মেশানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার বড়ি হিসাবে সেবন করা হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধাতব ফয়েলে পুড়িয়ে ধোঁয়া হিসাবেও এটিকে সেবন করা হয়ে থাকে। এই মাদকটি থাইল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয়, এবং পার্শ্ববর্তী দেশবার্মা থেকে এটি চোরাচালান করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এই মাদকের বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৭ সালে . পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে ইয়াবা আসতে শুরু করে। এই ট্যাবলেটের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হবার কারণে উচ্চবিত্তদের মাঝেই এটি মূলত: বিস্তার লাভ করে।
প্রকারভেদঃ
ঢাকায় তিন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যায়। প্রথম ধরনের ইয়াবা ট্যাবলেটের বেশির ভাগ সবুজ বা গোলাপি রঙের হয়। এর ঘ্রাণ অনেকটা বিস্কুটের মত হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ধরনেন ইয়াবা ট্যাবলেট এর দাম তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু এটিও নেশাসৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তৃতীয়ধরনের ট্যাবলেটি আরও সস্তা এবং নেশায় আষক্তদের নিকট এটি ভেজাল বলে পরিচিত।ইয়াবা সেবনকারীদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা অনুসারে, চিতা নামের পিলটি সবচেয়ে নিম্নমানের ইয়াবা পিল হিসেবে গণ্য হয়। এর গায়ে ক্ষুদ্র চিহ্ন থাকে। অন্যদিকে গোলাপ জল নামের ইয়াবা পিলকে উচ্চ মান পিল হিসেবে গণ্য করা হয়। ইয়াবা পিলের গায়ে ইংরেজি ডাব্লিউ ওয়াই লেখা থাকে। ওয়াই লেখার ধরণ দীর্ঘ হলে এবং ইয়াবার রঙ পুরোপুরি গোলাপি হলে ধারণা করা হয় সেটি ইয়াবা হিসেবে ভাল মানের।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
প্রথমদিকে ইয়াবা যৌনউত্তেজক বড়ি হিসাবে বাজারে পরিচিত ছিলো। কিন্তু দীর্ঘদিন সেবনের ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যুক্তরাজ্যের ড্রাগ ইনফরমেশন এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ইয়াবা ট্যাবলেটি খেলে সাময়িক ভাবে উদ্দীপনা বেড়ে যায়। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। নিয়মিত ইয়াবা সেবন করলে মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি,ক্ষুধামন্দা এবং মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা যেতে পারে। ইয়াবা গ্রহণের ফলে ফুসফুস, কিডনি সমস্যা ছাড়াও অনিয়মিত এবং দ্রুতগতির হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত হারে ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে। অভ্যস্ততার পর হঠাৎ ইয়াবার অভাবে সৃষ্টি হয় আত্মহত্যা প্রবণতা এবং হতাশা।দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা খেলে স্মরণশক্তি কমে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা শুরু হয় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, এমনকি অনেকে আত্মহত্যাও করে থাকে। এছাড়া হার্টের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে বা মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়েও অনেকে মারা যান। অনেকে রাস্তায় দুর্ঘটনায় পতিত হন। কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকেন। ইয়াবার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ও সাহিত্যিক ডা. মোহিত কামাল বলেন, নিয়মিত ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, শরীরে কিছু চলাফেরার অস্তিত্ব টের পাওয়া, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে। এ ছাড়া ইয়াবায় অভ্যস্ততার পর হঠাৎ এর অভাবে সৃষ্টি হয় হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা। তিনি বলেন, এ মাদক সাধারণ শান্ত ব্যক্তিটিকেও হিংস্র ও আক্রমণাত্মক করে তুলতে পারে। ইয়াবা গ্রহণে হ্যালুসিনেশন ও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। হ্যালুসিনেশন হলে রোগী উল্টোপাল্টা দেখে, গায়েবি আওয়াজ শোনে। আর প্যারানয়াতে ভুগলে রোগী ভাবে অনেকেই তার সঙ্গে শত্রুতা করছে। তারা মারামারি ও সন্ত্রাস করতেও পছন্দ করে।
ফ্রান্সে ইয়াবাঃ- গত এক বছর ধরে ফ্রান্সের প্যারিস শহরেও কিছু কিছু বাংলাদেশীকে এই ইয়াবা ইটালি থেকে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক পদ্ধ্যতিতে ট্রেন, ট্যাক্সি যোগে এনে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তারা সাধারনত এই ইয়াবা প্রতি পিস ১০টাকা, ৮ টাকা বা ৭ টাকা বিভিন্ন দামে বাংলাদেশীদের মদ্ধেই বিক্রি করে থাকে। আমরা যারা ফ্রান্স থাকি তারা সবাই জানি যে ফ্রান্স-ইতালি সেঞ্জিন এর অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং যাওয়া আসা খুবি সহজ। টিকেট থাকলে আর চেকিং এর ভয়ও নেই। এই ইয়াবা এততাই ছোট যে, একটা প্যান্টের ৪ পকেটে ভাগ করে করে সর্ব মোট ৪০০ ইয়াবা আনা সম্ভব। ২, ৩ টা প্যান্ট থাকলেই এর সঙ্খা গিয়ে দারায় ৮০০ থেকে ১,২০০ পিস। এই কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী প্রতি পিস ইয়াবা ইতালি থেকে মাত্র ২.৫০ ইউরো থেকে ৩.০০ ইউরো দিয়ে কিনে নিয়ে আসে। এই ইয়াবা প্যারিস শহরে আসা মাত্র বিভিন্ন বাংলাদেশীদের কাছে খবর ১ঘণ্টার মাঝে পউছে দেয়া হয় এবং ১ সপ্তাহের মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন ব্যাবসাটা কতটা লাভ জনক। লাভের টাকা গুনতে না গুনতেই আবার রওনা হয়ে যায় ইতালির পথে ইয়াবার সন্ধানে। আর এই ইয়াবা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আশে আরও সহজ পধ্যতিতে। গুটি সঙ্খক বাংলাদেশী।
এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এর লাইসেন্স বানিয়ে বাংলাদেশী বিভিন্ন খাবারের মধ্যে করে হাজার হাজার এই ইয়াবা ইতালিতে ট্রানজিট করায়। তার পর বিভিন্ন ইয়াবা বেবসাইদের মাঝে বিক্রি করে দেয়। তবে ইটালিতে এই ইয়াবা আরও কমে বিক্রি হয়। নিচে আপনাদের একটি ভিডিও তুলে ধরা হল কিভাবে ইয়াবা সেবন করা হয় ও এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বিশেসজ্ঞের পরামর্শঃ –
[youtube vaU1hB_skCY?modestbranding=1&rel=0 nolink]
সাস্থই সকল সুখের মূল, নিজের জীবনের প্রতি যত্নবান হন। এই মরন নেশা ইয়াবা আপনার জীবনকে অন্য কোন কিছুর চাইতে অনেক বেশী ক্ষতি করে। তাই ইয়াবা থেকে দূরে থাকুন। আগামী পর্বে থাকবে এ নিয়ে সম্পূর্ণ একটি প্রতিবেদন। কিভাবে এবং কেমন করে এটি ফ্রান্সে আনা হচ্ছে।
………… এই লেখার দ্বিতীয় পর্বে যেতে এখানে ক্লিক করুণ।
এবং মরন নেসা ইয়াবা এখন ইতালিতে… ইতালিতে ইয়াবা নিয়েও আমিওপারিতে একটি লেখা রয়েছে চাইলে এখানে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন।
[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পাড়বেন। ]]