• u. Dec ৫, ২০২৪

আমিওপারি ডট কম

ইতালি,ইউরোপের ভিসা,ইম্মিগ্রেসন,স্টুডেন্ট ভিসা,ইউরোপে উচ্চ শিক্ষা

ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর কাহিনী

ByKona

Nov 2, 2013

ছিলেন বিজ্ঞানী, হয়েছেন প্রতারক। তার প্রতিভা গুণে প্রতিষ্ঠান যেমন লাভবান হয়েছে, তেমনি পথে বসেছে অকল্যাণকর ব্যবহারে। নকল ক্রেডিট কার্ডের সহায়তায় বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থেকে লুট করেছেন কোটি টাকার বেশি। তার নাম সেলিম (৩২) গ্রেপ্তার হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। একই সঙ্গে তার আরও তিন শিষ্য গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডের প্রথম দিন গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম এটিএম বুথের টাকা লুটের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। বলেছে, বুথের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল তার নখদর্পণে। বিদ্যমান প্রযুক্তি ফাঁকি দেয়া মামুলি ব্যাপারে। অনার্স পাস করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, কিন্তু তার অধীনে কাজ করেছেন বুয়েট থেকে পাস করা ডজন খানেক ইঞ্জিনিয়ার। রংপুর জেলায় অধ্যয়নকালে তিনি উদ্ভাবন করেন খনিজ পদার্থ শনাক্তকরণ যন্ত্র। এছাড়া জনকল্যাণকর আরও কয়েকটি যন্ত্র আবিষ্কারের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৯, ১৯৯০ ও ১৯৯১ সালে উদীয়মান বৈজ্ঞানিকের খেতাব পান। তার প্রবন্ধ সংরক্ষিত আছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। বলেন, ১৯৯৫ সালে ঢাকায় আসি। আমার প্রতিভায় আশ্চর্য হয়ে বিখ্যাত কোম্পানি ‘অ্যাপল’ ও ‘ডিজিটাল’ চাকরির অফার করে। কম্পিউটার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হয়েও কম্পিউটারের ত্রুটি মেরামতের চাকরি পাই। এরপর সাইটেক থেকে টেক্সাস ইলেক্ট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি।

অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ওই প্রতিষ্ঠানের শ’ শ’ নষ্ট মাদারবোর্ড ঠিক করে দিয়েছি। কম্পিউটারের সকল ত্রুটি মেরামত করেছি। এরপর আর পেছনে তাকাইনি। ইলেক্ট্রনিক্স জগতের যেখানেই হাত দিয়েছি সেখানেই শ্রেষ্ঠ হয়েছি। টেক্সাস ইলেক্ট্রনিক্স-এর প্রথম এটিএম বুথ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আমার হাত দিয়েই। পর্যায়ক্রমে আরব বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা, প্রাইমসহ বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ৯০০ বুথ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে স্থাপন করেছি। এসব বুথের কারিগরি ত্রুটি মেরামত ও মেইনটেইন্সের দায়িত্ব পালন করেছি। এমনকি ত্রুটিপূর্ণ মেশিনের শব্দ মোবাইল ফোনে শুনে বাসায় থেকে তা ঠিক করে দিয়েছি। এতে হু হু করে বেতন বেড়েছে। ২০০৮ সাল থেকে মাসে দেড় লাখ টাকা তুলেছি। কিন্তু ফেনসিডিলের নেশায় সব টাকা উড়িয়েছি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, কার্ড জালিয়াতি চক্রের গডফাদার সেলিম। তার হাত দিয়েই বাংলাদেশে এটিএম বুথ চালু হয়। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ সার্ভিসের আইটি সাপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান টেক্সাস ইলেক্ট্রনিক্সের প্রধান আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেলিম কর্মরত ছিল। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ‘আমরা টেকনোলজি’ করা হয়। অন্য তিন প্রতারক সেলিমের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আইটি এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের আইটি সাপোর্ট ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছে। পরে চাকরিচ্যুত হয়ে তারা নকল ক্রেডিট কার্ড তৈরি করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। এক পর্যায়ে গত ২৩শে জুলাই রাজধানীর উত্তরা, গুলশান ও মতিঝিল এলাকা থেকে সেলিমসহ ৪ প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যরা হচ্ছে আরিফ হোসেন খান (৩৮), মঞ্জুরুল হক (৩০) ও আসাদুল ইসলাম (৩০) তাদের কাছ থেকে নকল ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন গোপন ক্যামেরা, কম্পিউটার, কার্ড রিডার অ্যান্ড রাইটার (কার্ড তৈরির যন্ত্র), ম্যাগনেটিক ব্ল্যাংক স্ট্রিপ কার্ড এবং অন্যান্য কম্পিউটার ও ইঞ্জিনিয়ারিং আইটেম উদ্ধার করা হয়। সেলিম আরও জানায়, ‘আমরা টেকনোলজি’ প্রতিষ্ঠানে সোনিয়া কবীর নামের একজন মহিলা কর্মকর্তা যোগ দিয়েই পুরনো স্টাফদের ছাঁটাই শুরু করেন। কাজের নামে তাদের হয়রানি করেন।

বেতন না দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য মানসিক নির্যাতন করেন। তখন থেকেই সেলিম ওই প্রতিষ্ঠানকে পথে বসানোর গোপন পরিকল্পনা করতে থাকে। প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ের সূত্র ধরে ব্র্যাক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের তথ্য চুরি করেন। পরে অন্যান্য প্রতারকের সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়া ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড তৈরি করে দফায় দফায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

যেভাবে কার্ড তৈরি করে: প্রথমে এটিএম বুথের সিপিইউ থেকে পেনড্রাইভের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্য চুরি। তারপর কাস্টমারের পাসওয়ার্ড ও পিনকোড চুরি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা দিয়ে। পরে কার্ড রিডার অ্যান্ড রাইটার যন্ত্রের মাধ্যমে ল্যাপটপের সহায়তায় সংগৃহীত তথ্য ব্ল্যাংক কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপে ধারণ করে নতুন কার্ড তৈরি। পরে ওই কার্ড ও গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত পাসওয়ার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন। ক্রমান্বয়ে এ-ই ছিল তাদের কাজ।

সেলিম জানান, ১৯৯৫ সালে তিনি সাইটেক নামের কম্পিউটার কোম্পানিতে হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০০০ সালে টেক্সাস ইলেক্ট্রনিক্সের এটিএম ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। পরে এর নাম রাখা হয় ‘আমরা টেকনোলজি’ সেলিম ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক সিবিএল ব্যাংকের এটিএম সার্ভিসের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনার কাজ করতেন। এ সূত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের ডাটা ভাণ্ডারে তার অ্যাকসেস থাকতো এবং এ সূত্র ধরেই ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের তথ্য চুরি করে ভুয়া ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে প্রথম দেড় লাখ টাকা তোলেন। এ ঘটনায় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা টেকনোলজি কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করে। ব্যাংকের যে কোন বুথে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ নিয়ে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথের নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে হাতাহাতি হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে বুথের টাকা ডাকাতির অভিযোগে মামলা দেয়। ওই মামলায় সেলিম জেল থেকে বের হয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এডিএন নামের এক কোম্পানিতে এটিএম মেশিন রিপেয়ার সেকশনে পার্টটাইম চাকরি নেয়। কোম্পানি বিক্রি হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন। ততদিনে তিনি ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। একদিকে বেকার অন্যদিকে নেশার টাকা যোগাড় করতে আবারও কার্ড জালিয়াতি শুরু করেন। সহকর্মী আরিফ ও মঞ্জুরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্র্যাক ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখার এটিএম বুথের তথ্য ও গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত কাস্টমারের পিন কোড চুরি করেন। ওই তথ্য দিয়ে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে প্রায় ১০০টি ভুয়া ডেবিট কার্ড বানান। ৫০টি ডেবিট কার্ড সেলিম নিজে রাখেন। বাকি ৫০টি মঞ্জুরুলকে দেন। সেলিম ওই কার্ড দিয়ে পর্যায়ক্রমে উত্তরা এলাকার বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে ৪৫ লাখ তোলেন। মঞ্জুরুল তার ডেবিট কার্ডের সহায়তায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

সেলিম আরও জানান, ২০১২ সালের রমজান মাসে গ্রেপ্তারকৃত আরিফের সহায়তায় ব্র্যাক ব্যাংকের পলওয়েল মার্কেটের এটিএম বুথ থেকে তথ্য ও কাস্টমারের পিন কোড চুরি করে এবং ৮০টি ভুয়া ডেবিট কার্ড তৈরি করেন। ওই ডেবিট কার্ডের ৩০টি কার্ড সেলিম ব্যবহার করে প্রায় ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন, বাকি ৫০টি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে আরিফ আরও ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের মার্চে সেলিম নিজে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে গোপন ক্যামেরা এবং ক্লোন কার্ড রিডার (এটিএম পানচিং প্লেস এ স্থাপন করা হয়) মাধ্যমে তথ্য চুরি করে ভূয়া ডেবিট কার্ড বানিয়ে আরও ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। সেলিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ প্রতারণামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৫৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তার দুই শিষ্য মঞ্জুরুল হক ও আরিফ হোসেন একই প্রক্রিয়ায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা তুলে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। গোয়েন্দারা জানান, মঞ্জুরুল হক রাজধানীর একটি বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে। ২০০৫ সালে আমরা টেকনোলজিতে যোগ দেয়। ওই সময় সেলিম তার বস ছিল। ২০০৮ সালে নেটওয়ার্ল্ড নামের প্রতিষ্ঠানে সে চাকরি নেয়। ওই প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য সেলিমকে সরবরাহ করে। এর সহায়তায় কার্ড জালিয়াতি করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন সেলিম। এ ঘটনায় মঞ্জুরুলের চাকরি চলে যায়। পরে ২০০৯ সালে সে ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরি নেয়। এর পর ২০১০ সালে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আইটি বিভাগে চাকরি নেয়। সেখানে কর্মরত অবস্থায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। একই সময়ে তাদের সহযোগী আসাদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসাদুল খুলনা ইউনিভার্সিটি থেকে ফরেস্ট্রি বিভাগে মাস্টার্স করেছে। অন্যদিকে এ চক্রের আরেক সদস্য আরিফ হোসেন খান বর্তমানে এডিএন (অ্যাডভান্স ডাটা নেটওয়ার্ক) প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। আমরা টেকনোলজিতে চাকরিকালে সেলিমের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং সেলিমের প্ররোচনায় পরে কার্ড জালিয়াতির মতো প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই প্রায় লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেতো। গ্রেপ্তারকৃত সেলিম ও আরিফ ফেনসিডিলে আসক্ত। ফেনসিডিলের নেশার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা এই সর্বনাশা জালিয়াতির কাজে লিপ্ত হয় বলে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন, তেজগাঁও, উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সূত্র

[[ আপনি জানেন কি? আমাদের সাইটে আপনিও পারবেন আপনার নিজের লেখা জমা দেওয়ার মাধ্যমে আপনার বা আপনার এলাকার খবর তুলে ধরতে এই লেখায় ক্লিক করে জানুন এবং  তুলে ধরুন। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানান। আর আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে রয়েছে অনেক মজার মজার সব ভিডিও সহ আরো অনেক মজার মজার টিপস তাই এগুলো থেকে বঞ্চিত হতে না চাইলে এক্ষনি আমাদের ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিয়ে আসুন। এবং আপনি এখন থেকে প্রবাস জীবনে আমাদের সাইটের মাধ্যমে আপনার যেকোনো বেক্তিগত জিনিসের ক্রয়/বিক্রয় সহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন ফ্রিতে দিতে পাড়বেন। ]]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *